ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

অনলাইন নির্ভর তরুণ সমাজ

স্বপ্নবাজ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ছাড়া জীবন কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের জীবনযাত্রাও পরিবর্তিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। বিশেষত, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, গেমিং এবং অনলাইন শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ছে তরুণরা। তাদের দৈনন্দিন জীবন প্রযুক্তির প্রতি এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির প্রভাব স্পষ্ট। এটি তরুণ সমাজের জন্য যেমন নতুন সম্ভাবনা এবং সুবিধা নিয়ে এসেছে, তেমনি তৈরি করেছে কিছু ঝুঁকিও।

প্রথমত, সোশ্যাল মিডিয়া তরুণদের জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোয় তাদের দৈনিক উপস্থিতি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, নতুন ট্রেন্ড অনুসরণ এবং সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে তারা দ্রুত আপডেটেড থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে মানসিক চাপ এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিও তৈরি হয়।

অন্যদিকে, অনলাইন শিক্ষা তরুণদের জীবনকে নতুন করে সাজিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী সময়ে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনেকাংশে অনলাইনে চলে গেছে। এতে শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে তা সবসময়ই ফলপ্রসূ হয়নি। অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যা (যেমন নেটওয়ার্ক সমস্যা) শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু বাধা সৃষ্টি করেছে। তবে, প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন স্কিল অর্জনের সুযোগও তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কোডিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা শেখার ক্ষেত্রে তরুণরা অনেক অগ্রগতি করেছে।

প্রযুক্তির সঙ্গে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও দেখা দিয়েছে। তরুণরা বেশির ভাগ সময় তাদের স্মার্টফোন বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে কাটাচ্ছে, ফলে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে  শারীরিকভাবে অসুস্থতা যেমন- চোখের সমস্যা, ঘাড় ও মেরুদণ্ডের ব্যথা, মানসিকভাবে অবসাদ এবং অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার ফলে তারা প্রকৃত বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ ছাড়া, তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলার জন্য অনেক সময় অনলাইন খ্যাতি এবং লাইকের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগী হয়ে পড়ছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অনলাইনে অপরিচিতদের মতামতের প্রতি নির্ভরশীলতা এবং সেলফি বা পোর্ট্রেটের প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মমূল্যায়নে প্রভাব ফেলছে।

তবে, অনলাইননির্ভর তরুণ সমাজকে কেবল নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়। কারণ, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিজের দক্ষতা বিকাশ করছে, একসঙ্গে কাজ করছে, এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে উঠে আসছে। আবার বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্কিল শিখে নতুন ক্যারিয়ার গড়তেও সক্ষম হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে তাদের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করবে।