বসন্ত এলো বলে! ফাল্গুনের মৃদুমন্দ বাতাসে যখন পলাশ, শিমুল, কাঁকন ফুলের রঙিন আভা ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাংলার প্রকৃতি সেজে ওঠে বসন্তের রঙে। গাছে গাছে নতুন পাতা, কোকিলের কুহু কুহু ডাক, আর রঙিন ফুলের সমারোহে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। এই ঋতু শুধু প্রকৃতির নয়, কৃষির ক্ষেত্রেও বয়ে আনে নতুন সম্ভাবনা ও কর্মচাঞ্চল্য।
বাংলাদেশের কৃষি প্রধানত তিনটি মৌসুমে বিভক্ত: খরিফ-১, খরিফ-২, এবং রবি। বসন্তকাল মূলত রবি মৌসুমের অন্তর্ভুক্ত, যা নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক ও মনোরম থাকে, যা বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। রবি মৌসুমে গম, সরিষা, আলু, ডাল, শাক-সবজি ইত্যাদি ফসলের চাষ বেশি হয়।
সময়ের কৃষি নিয়ে আলাপকালে কৃষি বিশেষজ্ঞ আশরাফুল আজম দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বসন্তকালে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফসলের বৃদ্ধি ভালো হয়। তবে এ সময় সেচের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়, কারণ বৃষ্টিপাত কম হয়। তাই সেচ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারলে ফলন ভালো পাওয়া যায়।’
বসন্তের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এ সময় বিভিন্ন ফলের গাছ মুকুল ধারণ করে। বিশেষ করে আম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি গাছের মুকুল এ সময় দেখা যায়। মুকুলের সঠিক পরিচর্যা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
তবে বসন্তকালে কিছু চ্যালেঞ্জও থাকে। আশরাফুল আজমের মতে, ‘এ সময় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, যা কিছু কীটপতঙ্গের আক্রমণ বাড়াতে পারে। তাই কৃষকদের নিয়মিত ফসলের খেতে নজরদারি করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বসন্তের শেষে, কৃষকরা খরিফ-১ মৌসুমের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এই সময়ে জমি প্রস্তুত করা, বীজ বপন ইত্যাদি কাজ শুরু হয়। এ প্রসঙ্গে আশরাফুল আজম বলেন, ‘খরিফ-১ মৌসুমের জন্য জমি প্রস্তুত করার আগে মাটির উর্বরতা পরীক্ষা করা উচিত। প্রয়োজন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করলে পরবর্তী ফসলের ফলন ভালো হবে।’
বসন্তকালীন কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে কৃষকরা ভালো ফলন ও আয় অর্জন করতে পারেন। তবে এ জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং নিয়মিত পরামর্শ গ্রহণ। আশরাফুল আজমের পরামর্শ অনুযায়ী, ‘কৃষকদের উচিত স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।’
বসন্তের এই সময়টি কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা ও সাফল্যের দুয়ার খুলে দেয়। সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা এ ঋতুর সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারেন।