ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পোশাকে একুশের ছোঁয়া

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
পোশাক ও ছবি: রঙ বাংলাদেশ

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ; একটি গৌরবময় ইতিহাস, একটি রক্তস্নাত অধ্যায়। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করা বীরদের স্মরণে এই দিনটি বাঙালির আবেগের প্রতীক হয়ে রয়েছে। একসময় একুশে ফেব্রুয়ারির উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি, প্রভাতফেরি আর শোকের আবহে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই দিনের চেতনা এখন ফ্যাশন, শিল্প, সংস্কৃতি; সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাকে এসেছে একুশের ছোঁয়া, যা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও সহজভাবে উপস্থাপন করছে।

একসময় একুশের পোশাক মানেই ছিল সাদা-কালোর গাম্ভীর্যপূর্ণ সমন্বয়। সাদা হলো পবিত্রতার প্রতীক, আর কালো শোকের। এখন এই রঙের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাল, সবুজ, নীল, হলুদসহ নানা বৈচিত্র্যময় উপাদান, যা ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি একুশের চেতনাকে নতুনভাবে প্রকাশ করছে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও ডিজাইনাররা এখন একুশের থিমে বিশেষ ডিজাইন করছেন। শহিদ মিনারের প্রতিচ্ছবি, বাংলা বর্ণমালা, ভাষা আন্দোলনের স্লোগান, কবিতা, এমনকি পোস্টারও ঠাঁই পাচ্ছে পোশাকের নকশায়। কারচুপি, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, নকশিকাঁথা ফোঁড়সহ নানা শৈল্পিক কৌশলে একুশের ভাবধারা তুলে ধরা হচ্ছে।

একুশের ফ্যাশনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে বাংলা বর্ণমালার ব্যবহার। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপস, এমনকি ওয়েস্টার্ন পোশাকেও একুশের ছাপ স্পষ্ট। শাড়িতে বড় অক্ষরে লেখা থাকে বাংলা বর্ণমালা- অ, আ, ক, খ..যেন প্রতিটি অক্ষর ভাষার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন বহন করে। ছেলেদের পোশাকেও এসেছে পরিবর্তন। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট, শার্টে শহিদ মিনার, ভাষা আন্দোলনের প্রতীক, কবিতার লাইন কিংবা স্মরণীয় স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছে। একুশের ফ্যাশনের আরেকটি আকর্ষণ হলো, পরিবারভিত্তিক ম্যাচিং পোশাক। বাবা-মা, সন্তানদের জন্য একই ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে, যা একুশের আবহকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলছে।

একুশের চেতনার প্রভাব এখন শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গহনা, ব্যাগ, জুতা; সবকিছুতেই একুশের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের জন্য হাতে আঁকা বাংলা বর্ণমালার কানের দুল, শহিদ মিনারের নকশা করা ব্রেসলেট কিংবা ভাষা আন্দোলনের স্মারকচিত্র খচিত ব্যাগ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ছেলেদের জন্যও রয়েছে ভাষা আন্দোলনের পোস্টার ডিজাইনের ব্যাজ, হাতঘড়ি, এমনকি মোবাইল কভার পর্যন্ত! তরুণ প্রজন্ম ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের দৈনন্দিন জীবনের স্টাইলেও একুশের চেতনাকে অন্তর্ভুক্ত করছে।

একুশের ফ্যাশন শুধুমাত্র আবেগের বিষয় নয়; এটি এখন ব্যবসায়িকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, অনলাইন স্টোর ও দোকানগুলোতে একুশের পোশাকের ভিড় বেড়ে যায়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও একুশের পোশাকের প্রচার-প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেসবুক, ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোতে বিশেষ অফারসহ একুশের পোশাক বিক্রি হয়, যা তরুণদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

এক সময় হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি যে ভাষা আন্দোলনের চেতনা ফ্যাশনের অংশ হয়ে উঠবে। তবে আধুনিক যুগে তরুণ প্রজন্ম ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নতুন ধারার পোশাককে বেছে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংযোগ বজায় থাকছে, তেমনি নতুন প্রজন্মের মাঝে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির অস্তিত্বের প্রতিচিহ্ন। শহিদের রক্তে রাঙানো এই দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, আর এর চেতনা নতুন মাত্রায় জায়গা করে নিয়েছে আমাদের ফ্যাশনে। পোশাকে, অলঙ্কারে, নকশায় ফুটে উঠছে ভাষা আন্দোলনের স্মারকচিত্র, বর্ণমালা আর ইতিহাস। সময় বদলেছে, কিন্তু একুশের মাহাত্ম্য কখনো বদলায়নি। বরং এটি আরও সমৃদ্ধ হয়েছে নতুন যুগের ছোঁয়ায়।

মডেল: পূর্ণিমা বৃষ্টি, মৃধা সাহা মম , শুভ, আমায়া সাহা ও অরিক্ত রায়