বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলন বা একুশের চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে অঙ্গীকার ও গর্বের বিষয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অগণিত ছাত্র-যুবক। তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমেই বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই আজও একুশের চেতনা আমাদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে প্রতিধ্বনিত হয়, বিশেষ করে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনকালে।
এই দিনটি শুধু একটি ইতিহাসের দিন নয়, বরং একটি চেতনার উপলক্ষ্য, একটি সংস্কৃতির গর্ব। ভাষার পক্ষে যারা আত্মবলিদান দিয়েছেন, তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সারা দেশের মানুষ প্রতিবছর একুশের চেতনায় জাগ্রত হন। তবে নারী পোশাকের মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা একটু ভিন্ন।

সংস্কৃতিমনা নারীদের মতে, ‘এটি শুধু বাহ্যিকভাবে একধরনের সাজগোজ নয়, বরং এক ধরনের অন্তর্নিহিত শক্তি, সংগ্রাম এবং অহংকারের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি, বাঙালি নারীর সংগ্রামের একটি গভীর চিহ্ন হয়ে উঠেছে। এই দিনে নারীরা শুধু ভাষার জন্য নয়, নিজেদের পরিচয়ের, আত্মসম্মান ও স্বাধীনতার জন্যও এক অবিস্মরণীয় প্রতীক হয়ে ওঠেন। তাদের পোশাকের মধ্যে একুশের রং যেন এক গভীর প্রতীক হয়ে থাকে।
অধিকাংশ নারী সাদা বা কালো শাড়ি পরিধান করে, যার সঙ্গে থাকে লাল রঙের ফুল। এটি একদিকে যেমন শোকের চিহ্ন, তেমনি অন্যদিকে জীবনের নতুন সূর্যোদয়ের প্রতীক। সাদা-কালো শাড়ি যেমন শোক ও স্মৃতির প্রতীক, তেমনি লাল ফুলের মাধ্যমে চেতনার উত্থানও ঘটে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে নারীরা পোশাকের মাধ্যমে একটি নতুন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন।
যেখানে তারা প্রমাণ করেন, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের জন্য লড়াই করা শুধুমাত্র পুরুষের কাজ নয়, নারীরাও সেই লড়াইয়ে অংশীদার। তাই তারা এই পোশাকের মধ্যে নারীর আত্মবিশ্বাস এবং ঐতিহ্যবোধ প্রকাশ করে, যা বাঙালি সমাজের গভীর সাংস্কৃতিক মর্মবোধের প্রমাণ।
এভাবে নারীর পোশাকের মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা তাদের সংগ্রামের অঙ্গীকার এবং শক্তির নিঃশব্দ ঘোষণা হয়ে ওঠে। নারীর পোশাক হয়ে ওঠে সাহস, আত্মমর্যাদা ও আন্দোলনের এক জীবন্ত প্রতীক, যা আজও বাঙালি চেতনায় অমর হয়ে রয়েছে।’
মডেল: পূর্ণিমা বৃষ্টি
আপনার মতামত লিখুন :