জহিরনামা

ভাওয়ালের রাজশ্মশানেশ্বরে জহির

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম

ভাওয়ালের রাজশ্মশানেশ্বরে জহির

ছবি: সংগৃহীত

জহির আজ ভাওয়াল রাজাদের ভিটায় ঘুরতে এসেছে। জহির জানতে পারে ইতিহাসখ্যাত ভাওয়াল জমিদারি বর্তমানে গাজীপুর জেলা। এর প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুর নামে বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে জয়দেবপুরে ভাওয়াল রাজারা না থাকলেও তাদের স্মৃতি স্মারক এখনো রয়ে গেছে।এখানে অবস্থিত ভাওয়াল রাজশ্মশানেশ্বরী তেমনই এক ঐতিহাসিক রাজ স্মারক। এটি দেশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্ন ঐতিহ্যের অংশ।

ভাওয়াল জমিদার পরিবারের সদস্যদের শবদাহ সৎকারের উদ্দেশ্যে রাজবাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে চিলাই নদীর দক্ষিণ পাশে ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী নামের এই সমাধি স্থাপন করা হয়। সেখানে শ্মশানের জমি রয়েছে প্রায় ৬ একর। আশপাশের লোকের মুখে জানতে পারি রাজার পরিবারের মৃত সদস্যদের নামে রাজ শ্মশানেশ্বরীতে সৌধ ছাড়াও মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ৭ স্তম্ভবিশিষ্ট একটি সামধি স্থল রয়েছে। রয়েছে একটি শিব মন্দিরও।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রমতে, মুন্সীগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনী গ্রামে ভাওয়াল জমিদারদের পূর্বপুরুষরা বাস করতেন। ১৮ শতকের দিকে বলরাম রায় ভাওয়াল পরগনার জমিদার দৌলত গাজীর দেওয়ান হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে দৌলত গাজীর জমিদারি বলরাম রায় নিলামে কিনে নেন। ১৭৪৩ সালে বলরাম রায়ের মৃত্যুর পর তার ছেলে কৃষ্ণরায় জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। তাতেই ভাওয়াল জমিদারি স্থায়িত্ব লাভ করে।

ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারি ১৮৫৬ সালে উত্তরাধিকারীদের একজন গোলক নারায়ণের মৃত্যুর পর তার ছেলে কালী নারায়ণ রায় জমিদারি পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। বস্তুত তার সময়ই ভাওয়াল জমিদারির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। কৃতিত্বের সঙ্গে জমিদারি পরিচালনার জন্য ব্রিটিশ সরকার কালী নারায়ণ রায়কে বংশানুক্রমে ব্যবহারের জন্য রায় চৌধুরী এবং রাজা উপাধি প্রদান করে। কালী নারায়ণের সময়ই ভাওয়াল রাজবাড়ি এবং ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী নির্মিত হয়। কথিত আছে ভারতের পুরী থেকে বিখ্যাত স্থপতি কামাক্ষ্যা রায়কে নিয়ে আসা হয় শ্মশানেশ্বরী নির্মাণের জন্য।

স্থানীয় বাসিন্দারা জহিরকে জানান, ভাওয়াল রাজবাড়ি শ্মশান গাজীপুরের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। কিন্তু এখানে এর কোনো নির্মাণকাল লেখা নেই। নেই কোনো ফলক। আছে শুধু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। সেখানেও নির্মাণের সময়কাল লেখা নেই।

জহির আরও ঘুরে জানতে পারে, শ্মশানটির চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় একটি শিব মন্দির রয়েছে। বহুবছর আগের মন্দিরটিতে নতুন রং করা হয়েছে। এর পূর্বপাশে শ্মশান মঠ। সামনের দিকে তিনটি মঠের নির্মাণৈশৈলী সাধারণ। বাকি চারটি মঠে অনেক কারুকাজ করা হয়েছে। তবে মঠগুলোর কিছু কিছু অংশ ভেঙে গেছে। সামনে একটি মাঠের মতো স্থান রয়েছে। এর পূর্বদিকে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরের পাশে শ্মশান।

ভাওয়াল রাজশ্মশান মন্দিরের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি  ‘ভাওয়াল রাজশ্মশানের ১৭-১৮ বিঘা জায়গা রয়েছে। ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ৬ বিঘা। বাকি জমি প্রভাবশালীরা ইজারার নামে দখল করে নিয়েছেন। এখানে কালীপূজা, স্বরস্মতি পূজা, বাসন্তি ও শিব পূজা হয়।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!