ফুল চাষ কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য চাষের তুলনায় ফুল চাষ খুবই কম হয়। দেশের উল্লেখযোগ্য কিছু অঞ্চল ছাড়া তেমন ফুল চাষ করতে দেখা যায় না কৃষকের। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুল চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন এটি দেশের অনেক অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বর্তমান কৃষি বাজারেও ফুল চাষের বেড়েছে ব্যাপক চাহিদা। তাই শাক-সবজি, ফলমূল চাষের পাশাপাশি কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের ফুল যেমন- গোলাপ, দোলনচাঁপা, গাঁদা, জবা, পদ্ম, বেলি, সূর্যমুখী ইত্যাদি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি একদিকে যেমন পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে আবার অন্যদিকে কৃষকের জন্য একটি লাভজনক আয়ের উৎস হিসেবেও কাজ করছে।
এ বিষয়ে আরও জানাতে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন, কৃষিবিদ মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজারে ফুল চাষের চাহিদা বেশ ভালো। তাই যে কৃষকেরা শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি চাষের পাশাপাশি ফুলের চাষাবাদেও আসতে চায় তারা নির্দ্বিধায় আসতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু সহজ উপায় তাদেরকে অবলম্বন করতে হবে। যেমন- প্রথমেই একটি উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
জায়গাটা এমন হতে হবে যেন সূর্যের আলো, জলবায়ু এবং বায়ু চলাচল সঠিকভাবে করতে পারে। কারণ, ফুল চাষাবাদে এগুলোর গুরুত্ব অপরিহার্য। এ ছাড়া ফুলের আকার ও গুণগত মান বৃদ্ধি করতে তাজা এবং সুষম মাটি প্রয়োজন। মাটির স্তর, জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং মাটির পুষ্টি উপাদান যাচাই করে চাষাবাদ করতে হবে। মাটির উন্নতির জন্য কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, যেটা মাথায় রাখতে হবে তা হলো, ফুলের জাত নির্বাচন। বিভিন্ন ফুল চাষের জন্য বিভিন্ন জাতের প্রয়োজন হয়, যেমন- গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, সূর্যমুখী ইত্যাদি। এসব জাত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আবহাওয়া, মাটির ধরন এবং বাজারের চাহিদা অনুসরণ করতে হবে। ফুল চাষের জন্য সাধারণত টুকরো বা চারা রোপণ করা হয়। রোপণের সময় এবং গভীরতা অনুযায়ী ফুলের বৃদ্ধি ঠিক থাকে।
তৃতীয়ত, ফুল চাষে সেচের ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে। যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে। এর ফলে ফুলের শিকড় নষ্ট হতে পারে। পাশাপাশি, মাটি শুকনো না হয়ে মৃদু আর্দ্র রাখার চেষ্টা করতে হবে। বৃষ্টি বা সেচের পর মাটি না শুকানোর কারণে রোগবালাইয়ের আক্রমণও হতে পারে। পরিশেষে মাথায় রাখতে হবে, ফুল চাষাবাদে রক্ষণাবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত ফুল গাছের পাতা ও শাখা পরীক্ষা করে দেখতে হবে যেন কোনো পোকামাকড় বা রোগের প্রভাব না পড়ে। প্রয়োজনে যথাযথ কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। সার প্রয়োগের মাধ্যমে ফুল গাছের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হবে, তবে অতিরিক্ত সার ব্যবহারও ক্ষতিকর হতে পারে।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, গাছের ফুল যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠে, তখনই তা সংগ্রহ করা উচিত। ফুলের সংগ্রহ পর্বে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, যাতে ফুলের ক্ষতি না হয় এবং ফুলের গুণগত মান ঠিক থাকে। সংগ্রহের পর তা দ্রুত বাজারে বিক্রি করতে হবে, যাতে ফুল তাজা থাকে এবং বেশি মূল্য পাওয়া যায়। এভাবেই স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি ঘটাতে এবং পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে কৃষকেরা চাইলে ফুল চাষাবাদে আসতে পারেন।’