ঢাকা শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫

ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার পূর্বপ্রস্তুতি

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

যেসব ডায়াবেটিস রোগী নিরাপদে রোজা পালনে সংকল্পবদ্ধ হন, তাদের রমজানের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পূর্বপ্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ পূর্বপ্রস্তুতির একটি অংশ হচ্ছে রমজানের পূর্বে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ। এ সময় চিকিৎসক একজন ডায়াবেটিস রোগীর সব রোগ ইতিহাস, ডায়াবেটিসের ধরন, ডায়াবেটিসের ওষুধ ও এর প্রকারভেদ, ডায়াবেটিসের জটিলতা ইত্যাদি যাচাই করেন এবং সেই ডায়াবেটিস রোগীর নিরাপদ রোজা পালনের সক্ষমতা বা অক্ষমতা বা নিরাপদ চিহ্নকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভাজন করে থাকেন।

যেমন-কম ঝুঁকি, মধ্যম মাত্রার ঝুঁকি বা অধিক মাত্রার ঝুঁকি। ঝুঁকির প্রকারভেদ নিরিখে একজন চিকিৎসক তার রোগীকে রোগীর রোজা পালনের সক্ষমতা বা অক্ষমতা ও জটিলতা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেকের মনে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে রোজা পালন অবস্থায় গ্লুকোমিটারের সুগার চেক করলে রোজা ভেঙে যাবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, নিরাপদে ও সুস্থভাবে রোজা পালনে রক্তে সুগার চেক করা যেতে পারে। এতে রোজা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

কখন রক্তের সুগার পরীক্ষা করবেন
রোজা পালন অবস্থায় কখন কখন রক্তের সুগার পরীক্ষা করবেন, তা নির্ভর করে প্রত্যেক রোগী কী ধরনের ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করছেন তার ওপর। যেসব রোগী ইনসুলিন বা সালফোনাইল ইউরিয়া গ্রুপের ওষুধ সেবন করছেন তাদের ক্ষেত্রে দিনের একাধিক সময়ে রক্তে সুগার চেক করার প্রয়োজন হয়।
বেশিরভাগ সময়ই একজন চিকিৎসক ডায়াবেটিস রোগীদের নিম্নলিখিত সময়গুলোয় গ্লুকোমিটারের রক্তের সুগার চেক করার পরামর্শ প্রদান করে থাকেন তা হলো- সেহরির আগে, সকালে (সেহরির ৪-৬ ঘণ্টা পর), মধ্য দুপুরে (বেলা ১১-১২টার মধ্যে), মধ্য অপরাহ্নে (দুপুর ২টার মধ্যে), ইফতারের আগে (ইফতারের ১-২ ঘণ্টা আগে), অথবা যে কোনো শারীরিক অসুস্থতার সময় তাৎক্ষণিকভাবে বা হাইপো বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা শরীরের রক্তে সুগার কমে বা বেড়ে যাওয়ার যে কোনো লক্ষণ অনুভূত হলে।

খাদ্য তালিকার পুনর্বিন্যাস
রমজান মাসে অতিভোজন বা অতিরিক্ত তেল, মসলাদার, ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। রমজানের আগেই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে। কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীকে এসব মেনে চলতে হবে। সেগুলো হচ্ছে—

  • ক্যালরি মেপে সেহরি, ইফতার ও ডিনার বা নৈশকালীন আহার খেতে হবে।
  • প্রত্যেক বেলার আহারে কম শর্করাযুক্ত ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে।
  • খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল, সবজি বা সালাদ থাকতে হবে।
  • অতিরিক্ত মসলাদার, ভাজাপোড়া, মিষ্টান্ন বা মিষ্টি জাতীয় তরল বা শরবত এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয়
রমজান মাসে দৈনন্দিন রুটিনে অনেক পরিবর্তন আসে, যেমন-খাদ্য গ্রহণের সময় পরিবর্তন, খাদ্যের ধরন পরিবর্তন ইত্যাদি। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ বা অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, বাড়াতে পারেন, রোজাকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা ইফতারের পর হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি হতে পারে।

যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে রমজানের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে। এ সময় একজন চিকিৎসক প্রত্যেক রোগীর ওষুধের মাত্রা ও ওষুধ গ্রহণের সময়কাল ও প্রয়োজনে ওষুধের ধরন পুনর্নির্ধারণ করে থাকেন।

কখন রোজা ভেঙে ফেলতে হবে

  • প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা কমে বা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একজন চিকিৎসক তার রোগীদের নিম্নলিখিত অবস্থায় রোজা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  • যদি রক্তে সুগারের মাত্রা <৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা <৩.৯ মিলিমোল/লিটার হয়।
  • যদি রক্তে সুগারের মাত্রা >৩০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা >১৬.৬ মিলিমোল/লিটার হয়।
  • রোজা পালনকালে রক্তে সুগার কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে (যেমন-বুক ধড়ফড়, হাত-পা কাঁপা, খিঁচুনি অতিরিক্ত স্বরে আওয়াজ, অবসাদগ্রস্ততা ইত্যাদি) বা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে (যেমন-অতিরিক্ত পানি পিপাসা, অতিরিক্ত ক্ষুধা, অবসাদগ্রস্ততা, অতিরিক্ত প্রস্রাব, বমি ভাব বা বমি, তীব্র পেটব্যথা ইত্যাদি) অথবা পানিশূন্যতা দেখা দিলে, এমনকি অন্য যে কোনো তীব্র শারীরিক অসুস্থতার সময়। রমজানে নিরাপদে রোজা নিশ্চিত করার জন্য একটি গঠনমূলক পূর্বপ্রস্তুতি, স্বাস্থ্য সচেতনতা, সর্বজনীন সমন্বয় সাধনমূলক চিকিৎসা পরামর্শের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আসন্ন রমজানের আগেই রোজা রাখার প্রস্তুতি নিন ও নিরাপদে রোজা পালন করুন।