ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার

স্বপ্নই পৌঁছে দেয় সাফল্যের শিখরে

আরফান হোসাইন রাফি
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

যতটা কঠিন জীবন, ততটাই দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন শিরিন আক্তারের গল্প। বাংলাদেশে অ্যাথলেটিকসের মাঠে তার নাম এখন আলোকিত। শুরুটা হয়েছিল, সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে বিকেএসপির মাঠে। সেই দিন  খেলোয়াড় বাছাইপর্বে শিরিন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে দৌড়ে এসে সেখানে নাম লেখান। আর এ সাহসিকতাই তাকে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়, যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর শিরিন কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার দৌড়ের দক্ষতা ও শারীরিক সক্ষমতা উন্নত করেন। এরপর পেতে থাকেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক সাফল্য। ২০১৪ সালে প্রথমবার তিনি  ১০০ মিটার দৌড়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছিলেন এরপর এক দশকে তার শোকেসে জমা পড়েছে আরও ১৫টি সেরার পদক। সর্বশেষ গত সোমবার ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে তিনি পেয়েছেন ১৬তম সাফল্য। কিন্তু এই এক দশকের যাত্রাপথ তার জন্য সহজ ছিল না! প্রতি মুহূর্তে তাকে পেরোতে হয়েছে নানা রকম সংগ্রাম এবং প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সেসব গল্প। যেখানে তিনি জানান, ‘তার জীবন ও সাফল্যের গল্পটি শুধুই একটি ক্রীড়া প্রতিভার উত্থানের কাহিনি নয়, বরং এটি কঠিন সংগ্রাম, সাহসিকতা এবং দৃঢ় সংকল্পের প্রতিচ্ছবি। সাতক্ষীরার এক গ্রামে জন্ম নেওয়া শিরিন আক্তারের জন্য প্রথমেই বাধা ছিল তার পরিবার। শিরিনের মা-বাবা মেয়ের খেলাধুলায় ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি।

বরং তাদের ইচ্ছা ছিল মেয়েকে বড় করে তোলার পর দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশের অনেক রক্ষণশীল পরিবারের মতোই তাদের ধারণা ছিল মেয়েদের জায়গা ঘর আর সংসারেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু শিরিন আক্তার ছিলেন অন্য রকম। পরিবারের এবং সমাজের এসব বাধা তার ইচ্ছাশক্তিকে দমাতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি দৌড়াতে ভালোবাসতেন। দৌড়ানোর সেই ভালো লাগা তাকে নিয়ে যায়, এক অন্যরকম স্বপ্নের পথে।

শিরিন জানতেন, পরিবার ও সমাজের চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন ঘটাতে তাকে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। এ সংকল্প নিয়েই তিনি এগিয়ে যান স্বপ্নের পথে। যে স্বপ্ন তাকে এগিয়ে নেয় সাফল্যের শিখরে। তাই আজ শিরিন আক্তার একটি নাম নয়, একটি অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন, যতটা কঠিন জীবনই হোক, ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।’