চাঁদের মালিক কে?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৮:৪৬ পিএম

চাঁদের মালিক কে?

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদের মালিকানা নিয়ে কৌতূহল মানুষের বহুদিনের। কবিতা-গল্পে চাঁদের মালিকানা নিয়ে মজার ব্যাখ্যা থাকলেও বাস্তবে এই বিষয়ে রয়েছে বৈশ্বিক আলোচনা ও আন্তর্জাতিক আইন। সম্প্রতি চীন চাঁদের বুকে তাদের লাল পতাকা উড়িয়েছে, যা চাঁদ নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

চাঁদে নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতা

চীন, ভারত, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ চাঁদে তাদের গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা ইনটুইটিভ মেশিনস প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চাঁদে একটি ল্যান্ডার স্থাপন করেছে। নাসা ২০২৬ সালে আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে, আর চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, চীন চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনাও করছে।

চাঁদের মালিকানা: আইনগত দৃষ্টিভঙ্গি

চাঁদকে কেউ দখল করে নিতে পারবে না—এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বহু আগেই। ১৯৬৭ সালে জাতিসংঘ ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ গ্রহণ করে, যেখানে বলা হয়, চাঁদ কোনো দেশ বা ব্যক্তির সম্পত্তি হতে পারে না, বরং এটি পুরো মানবজাতির জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চুক্তির লক্ষ্য ছিল মহাশূন্যকে সামরিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বানানো ঠেকানো।

এরপর ১৯৭৯ সালে আরও একটি চুক্তি ঘোষণা করা হয়, যেখানে বলা হয়, কোনো দেশ বা সংস্থা চাঁদের সম্পদের ওপর মালিকানা দাবি করতে পারবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিতে সই করেনি। বরং ২০১৫ সালে একটি আইন পাস করে, যা মার্কিন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মহাশূন্য থেকে খনিজ আহরণ ও বিক্রির অনুমতি দেয়। এই আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে।

চাঁদের খনিজ সম্পদ ও ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাঁদ নিয়ে প্রতিযোগিতার মূল কারণ সেখানে থাকা মূল্যবান খনিজ ও ধাতু। লন্ডন ইনস্টিটিউট অব স্পেস পলিসি অ্যান্ড ল-এর বিশ্লেষক সাইদ মোস্তেশার বলেন, মহাকাশ মিশনের জন্য প্রতিটি সংস্থাকে রাষ্ট্রীয় অনুমোদন নিতে হয়, তাই রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মহাকাশ নীতি ও আইন গবেষক জিল স্টুয়ার্ট বলেন, চাঁদের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকার অনেক মিল রয়েছে। সেখানে যে দেশ বা সংস্থা আগে গবেষণা ঘাঁটি তৈরি করবে, তারা ভবিষ্যতে অনেক সুবিধা পাবে।

চাঁদের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অন্যান্য শক্তিশালী দেশ চাঁদে নিজেদের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র আর্টেমিস চুক্তির মাধ্যমে চাঁদের সম্পদ ব্যবহারের নতুন নিয়ম চালুর চেষ্টা করছে, যেখানে ৪০টির বেশি দেশ যুক্ত হয়েছে। তবে চীন এই চুক্তিতে নেই, বরং তারা নিজেদের মহাকাশ কর্মসূচি স্বাধীনভাবে এগিয়ে নিচ্ছে।

চাঁদের মালিকানা নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত না থাকলেও স্পষ্টতই মহাকাশে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে চাঁদের সম্পদ ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আরও আন্তর্জাতিক চুক্তি ও আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে।

 

আরবি/একে

Link copied!