যুগে যুগে ঈদ ফ্যাশন

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

যুগে যুগে ঈদ ফ্যাশন

পোশাক ও ছবি: রঙ বাংলাদেশ

এখন মাহে রমজান, বিশ্বমুসলিমদের আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ইবাদতের মাস। এ মাসের শেষেই অসীম আনন্দের বার্তা নিয়ে আসবে ঈদ; আর ঈদ মানেই ফ্যাশনের জয়জয়কার। নতুন পোশাক, গহনা, সাজসজ্জা-সব কিছুতেই এক ভিন্ন ধরনের মোহ। প্রতিটি ঈদেই নতুন রঙের কাপড়ে মানুষ নিজেকে জাহির করে। তবে যুগে যুগে ঈদ ফ্যাশনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। চলুন একনজরে দেখে আসা যাক ৯০ দশক থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঈদ ফ্যাশনের ট্রেন্ডগুলো-

৯০-এর দশক

৯০ দশক ছিল ঐতিহ্যবাহী পোশাকের প্রাধান্য দেওয়া একটি স্বর্ণালি যুগ। যেখানে পুরুষ ও নারীরা সাধারণত সহজ, সরল এবং ক্লাসিক ডিজাইনের পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। সেসময় পুরুষদের শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি, সোজাসাপ্টা প্যান্ট এবং নারীদের সালোয়ার কামিজ ও শাড়ির পছন্দ ছিল অনেক বেশি। শাড়ির ক্ষেত্রে জামদানি, বেনারসি, সিল্ক, এবং শিফনের শাড়ি খুব জনপ্রিয় ছিল। এ ছাড়া সালোয়ার-কামিজে থাকত ঐতিহ্যবাহী কাট এবং গ্রে রঙের ব্যবহারের আধিক্য। গহনা, হালকা মেকআপ এবং তেলের চুল সজ্জাও ছিল বেশ প্রচলিত।

২০০০-এর দশক

দুই হাজার সালের দিকে ঈদ ফ্যাশনে দেখা যায় কিছুটা পরিবর্তন। নব্বই দশকের সাদামাটা ফ্যাশন থেকে বেরিয়ে ডিজাইনার পোশাক এবং নতুন স্টাইলের প্রবণতা শুরু হয়। পুরুষরা শেরওয়ানি, পাঞ্জাবির পাশাপাশি, আধুনিক কাটের টিউনিক, ট্রাউজার বা ক্যাজুয়াল শার্ট পরতে শুরু করেন। নারীদের মধ্যে সালোয়ার কামিজ, লেহেঙ্গা এবং শিফন শাড়ি পরার পাশাপাশি ফিউশন স্টাইলের পোশাকও জনপ্রিয় হতে থাকে। বিভিন্ন ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক এবং আধুনিক রঙের সমন্বয়ে এক নতুন ট্রেন্ডের সূচনা হয়। তৎকালীন সময়ে সালোয়ার কামিজের ডিজাইনটি অনেক পরিবর্তন হয়, যেমন অ্যাম্ব্রয়ডারি এবং রিচ ফ্যাব্রিকের ব্যবহারের ফলে পোশাকগুলো অনেক বেশি গ্ল্যামারাস এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। নারীদের পোশাকের মধ্যে ইন্ডিয়ান শাড়ি, চোলি, লেহেঙ্গা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

২০১০-এর দশক

২০১০ সালের দিকে ঈদ ফ্যাশন হয়ে ওঠে আরও বৈচিত্র্যময়। ডিজাইনার পোশাকের পাশাপাশি জনপ্রিয় হতে শুরু করে ব্র্যান্ডেড পোশাকও। পুরুষরা পাঞ্জাবির পাশাপাশি ফরমাল ব্লেজার, স্যুট এবং অন্য স্টাইলিশ পোশাক পরতে শুরু করেন। নারীদের সালোয়ার-কামিজের ডিজাইনে পরিবর্তন হয়ে  আধুনিক গাউন, লেহেঙ্গা এবং স্টাইলিশ শাড়ির প্রবণতা বাড়ে। সিল্ক, শিফন, সাটিন এবং অন্যান্য রিচ ফ্যাব্রিকের পোশাক আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময়টা ছিল ডিজাইনার পোশাকের সেলিব্রিটি সংস্কৃতির প্রভাব এবং অনলাইন শপিংয়ের আগমনের সময়।

২০২০-এর দশক

বর্তমান সময়কে বলা হয় আধুনিক ফ্যাশনের অন্যতম যুগ। এই সময়ের ছেলে-মেয়েরা ট্রেন্ডের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া নান্দনিক ডিজাইনের এথনিক ও ওয়েস্টার্ন পোশাকের দিকে ঝুঁকছে। এ ছাড়া ডিজাইনার পোশাকের পাশাপাশি কাস্টমাইজড এবং অনলাইন ব্র্যান্ডের পোশাকগুলোর জয়জয়কার। পুরুষেরা ক্যাজুয়াল শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি এবং স্যুটের সঙ্গে শালীন ডিজাইনের ব্লেজার পরিধান করছেন। নারীরা শিফন শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, লেহেঙ্গা, ফিউশন ড্রেস এবং কুর্তি পরছেন, যেখানে আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী উপাদানের একটি সুন্দর মিশ্রণ রয়েছে। বিশেষ করে, ডিজাইনার সালোয়ার কামিজ, অ্যাম্ব্রয়ডারি বা হ্যান্ডলুম ফ্যাব্রিকের শাড়ি এবং কাস্টমাইজড পোশাকগুলোর দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তবে একটি  অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ৯০ দশকে যে পোশাকগুলো ঈদের সময় খুবই জনপ্রিয় ছিল সেগুলো এখন আবার ফিরে এসেছে নতুন রূপে। ডিজাইনের নতুনত্ব এবং রঙের বৈচিত্র্যের মাধ্যমে সেগুলো হয়ে উঠেছে আরও আধুনিক এবং ফ্যাশনেবল; যা তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি অন্যতম এবং আকর্ষণীয় ফ্যাশন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!