আজ ৮ মার্চ, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ দিনটি নারীদের সম্মান, তাদের অবদানকে স্বীকৃতি এবং সমতার দাবিতে সচেতনতা তৈরির জন্য উদযাপিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিনটি পালন করা হচ্ছে। নারীদের প্রতি অন্যায়, বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এই দিবসের মূল লক্ষ্য। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
কেন ৮ মার্চই নারী দিবস?
প্রথমদিকে নারী দিবসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ ছিল না। তবে ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সময় রুশ নারীরা "রুটি ও শান্তি"র দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন। এই আন্দোলনের মাত্র চার দিনের মাথায় সম্রাট জার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং নতুন সরকার নারীদের ভোটাধিকার দেয়।
সে সময় রাশিয়ায় প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই ধর্মঘট হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি, যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে পড়ে ৮ মার্চ। পরবর্তীতে এই তারিখেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নারী দিবসের প্রতীক রঙ: কেন বেগুনি?

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতীকী রঙ বেগুনি, যা ন্যায়বিচার ও মর্যাদার প্রতিচ্ছবি। এটি নারীবাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিভিন্ন দিবসের জন্য নির্দিষ্ট রঙ নির্ধারিত আছে— যেমন, বিশ্ব শান্তি দিবসে সবুজাভ নীল, মে দিবসে লাল, পরিবেশ দিবসে সবুজ। তেমনি নারী দিবসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেগুনি, যা নারীর শক্তি, সমতা ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত।
নারী দিবসের সূচনা: কিভাবে শুরু হলো?
নারী দিবসের ধারণার উৎপত্তি শ্রমিক আন্দোলন থেকে। ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের প্রায় ১৫ হাজার নারী কাজের সময় কমানো, ন্যায্য মজুরি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। এর পরের বছর, আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রথমবারের মতো জাতীয় নারী দিবস ঘোষণা করে।
এই ধারণাকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার কৃতিত্ব যায় জার্মান সমাজতন্ত্রী ক্লারা জেটকিনের। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে এক আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে তিনি নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। ১৭টি দেশের ১০০ জন নারী তার এই প্রস্তাবে একমত হন এবং ১৯১১ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয়।
নারী দিবসের শতবর্ষ উদযাপন
২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ১১৪ বছর পূর্ণ করে। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ দিনটি বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকারের জন্য সংগ্রাম ও অগ্রগতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
নারী দিবস শুধুমাত্র উদযাপনের জন্য নয়, বরং এটি নারী অধিকারের লড়াই, সমতার দাবি এবং নারীদের ক্ষমতায়নের এক অনন্য দিন।