ঢাকা রবিবার, ০৯ মার্চ, ২০২৫

নারীর অভিযানে রঙিন দুনিয়া

আরফান হোসাইন রাফি
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম
ছবি: সৌজন্য

চার দেওয়ালের সামাজিক গণ্ডি পেরিয়ে নারীরা যখন স্বপ্নের পথে পা রেখেছে, তখন তারা খুঁজে পেয়েছে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এক নতুন দুনিয়া, যেখানে সব বাধা ভেঙে তারা ফুটিয়ে তুলেছে এগিয়ে যাওয়ার সাহস আর স্বাধীনতার রং। তাই তো এখন ভ্রমণ শুধু একটি শখ নয়, বরং হয়ে দাঁড়িয়েছে আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার এক অমোঘ প্রতীক। নারীরা এখন শুধু পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে না, বরং নিজের শক্তি, সম্ভাবনা এবং সীমাহীন আকাঙ্ক্ষাকে খুঁজে পাচ্ছে।

একেকটি নতুন জায়গা, একেকটি নতুন ভাষা, একেকটি নতুন অভিজ্ঞতা; নারীর যাত্রায় প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক নতুন অধ্যায়। কবি নজরুলের কথায়, ‘চলো চলো, দূর পথে চলো, চলো চলি আমারে সঙ্গে।’ এই লাইনটি যেন নারীর অভিযানের পাথেয় হয়ে উঠেছে। তারা এখন শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, সমাজ ও জাতির জন্যও এক নতুন আলোর পথ তৈরি করছে। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তেমনই একজন নারীর গল্প।

অদম্য সাহসের সঙ্গে যিনি পারি দিচ্ছেন বাংলার মাঠঘাট থেকে পৃথিবীর বিরান পথ। বলছি, চট্টগ্রামের বাঁশখালী গন্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবীণ শিক্ষক রশিদ আহমেদ ও গৃহিণী তৈয়বা খাতুনের মেয়ে তাহুরা সুলতানা রেখার কথা। যিনি প্রতিটি গন্তব্যেই আবিষ্কার করছেন নিজের শক্তি এবং স্বাধীনতার নতুন দিক। কিন্তু সামাজিক নানা বাধা ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি?

প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামের মেয়ে। খুব ছোট থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে আমার ভালো মেলবন্ধন। সেই জায়গা থেকেই পাহাড়ে যাওয়া এবং ভ্রমণ করা। ভ্রমণ করতে গিয়ে অনুভব করলাম মানসিক শান্তির যে ব্যাপারটা। মীরসরাইয়ের কিছু পাহাড় দিয়ে আমার ভ্রমণ যাত্রা শুরু হয়, এরপর একেক করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গ অভিযানের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মাঝখানে আমি বিভিন্ন চাকরি করেছি, কিন্তু সেসব চাকরি আমাকে ধরে রাখতে পারেনি, মানসিক শান্তি এনে দিতে পারেনি। আমার মনে হয় পাহাড় কিংবা প্রকৃতিই আমার ঠিকানা যেখানে আমি মানসিক তৃপ্তি পাই।  

তাই চাকরি ছেড়ে দিনের পর দিন পাহাড়ে কাটাতে লাগলাম। মেয়ে হয়ে পাহাড়ে দিনের পরদিন কাটানোর বিষয়টা, সামাজিক দৃষ্টিকোণ কিংবা নিরাপত্তার ভয়ে শুরুতে পরিবার মেনে নিতে পারেনি। তবে একটা সময় পর তারা যখন বুঝতে পারে, এখানে আমি মানসিক শান্তি পাই। তখন থেকে আমাকে মেনে নিয়েছে। তবে সামাজিক প্রতিকূলতা আমাকে আঘাত করেছে বার বার! উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা যদি বলি, আমি প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করতাম।

এখন পাহাড়ে যেটা হয়, সেখানে তো বোরকা পরে থাকা যায় না বা হয়তো যায়! কিন্তু আমি কমফোর্টেবল পোশাক পরতেই সব সময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাকে প্রশ্ন তুলে পোশাক নিয়ে যে, ‘আপু আপনি তো টিশার্ট পরেন, এটা আমাদের সংগঠনের বদনাম হচ্ছে।’ এ রকম অনেক সামাজিক মনোভাব আমাকে আঘাত করেছে। তবে আমি সব সময় নিজেকে প্রাধান্য দিই; তাই এসব বিষয় এড়িয়ে চলি।

নারী দিবস উপলক্ষে সব নারীদের বলতে চাই, নারীরা যেন নিজেদের প্রাধান্য দেয়। তাহলে আর কোনো সামাজিক বাধাই কাউকে ধরে রাখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আর যদি কারো অভিযানের ইচ্ছে থাকে তাহলে বেরিয়ে পড়ুন; কেননা ভ্রমণ শুধু মানসিক শুদ্ধতার বা নতুন দুনিয়ার পথ অনুসন্ধান নয়, বরং এটি একটি মেধা, আগ্রহ এবং সাহসের এক অনবদ্য উদাহরণ। অভিযান আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে সহযোগিতা করে। কখনো কখনো একটি সাধারণ স্থান বা একটি অপরিচিত দেশও আমাদের কাছে হয়ে ওঠে রঙিন, যখন আমাদের চোখে নতুন পৃথিবী খোলামেলা হয়ে ওঠে।’