স্বপ্ন এখন আকাশে ওড়ে

ওমর ফারুক

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

স্বপ্ন এখন আকাশে ওড়ে

ছবি: সৌজন্য

এসএসসি পরীক্ষার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। বাবার সংসারে হাল ধরার জন্য পাড়ি জমান ঢাকায়। কাজ শুরু করেন ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি হিসেবে। সেই থেকেই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে বিকল্প কিছু করার চিন্তা। চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে বিমান তৈরি করার। যেই ভাবা, সেই কাজ। নিজের মেধা আর আশপাশের ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ দিয়ে শুরু করেন রিমোট কন্ট্রোল বিমান তৈরির কাজ।

কিন্তু তাতে তেমন সফলতা আসেনি। ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েনি ছেলেটা। বরং মাথায় চেপেছে জেদ। তাকে পারতেই হবে। ভাবনায় যুক্ত করতে থাকেন নতুন কিছু। কিন্তু লক্ষটা বিমানেই থাকে। এবার চেষ্টা করেন আরসি বিমান তৈরি করার। টানা ৪ বছর চেষ্টা করে আরসি বিমানটি তৈরি করতে পেরেছেন।

বলছি, মানিকগঞ্জের ষাইটঘর তেওতা এলাকার তরুণ উদ্ভাবক জুলহাস মোল্লার কথা। যিনি নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করেছেন, একটি আল্ট্রালাইট বিমান, যা আকাশে উড্ডয়ন করে পুরো দেশের মানুষকে অবাক করেছে। তার এই অর্জন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

এলাকার বাসিন্দারাদের কাছে জুলহাস এখন বিজ্ঞানী জুলহাস। তাকে এবং তার বিমানটিকে দেখতে ভিড় করছেন দূরদূরান্তোর মানুষ। জুলহাসের এ সাফল্যের গল্পের পেছনের চিত্র একাধিক গল্পে গল্পে মোড়ানো। খুব সহজ ছিল না, এ পথ পাড়ি দেওয়া।  চার বছর ধরে অক্লান্ত চেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমে জুলহাসের বিমান উড়ছে আকাশে। প্রতিবছরই যমুনার চরে উড্ডয়নের চেষ্টা করেছেন জুলহাস। বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হলেও। এবার সফল হয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই প্লাস্টিকের জিনিস কাটাকাটি করে এটা-ওটা বানাতে চাইত জুলহাস। তার এ পাগলামি দেখে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলেই তার সরল উত্তর ছিল, একদিন দেখবে আমি কী বানাইছি। সারা দেশের মানুষ দেখবে। সবাই অবাক হবে। বিস্ময়ে তাকিয়ে রইবে আমার দিকে। হয়েছেও তাই। পুরো বাংলাদেশ জুলহাসের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়েছে। সারা দেশে হইচই ফেলে দিয়েছে জুলহানের আবিষ্কার।  

মূলত টাকার জোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন, আর অ্যালুমিনিয়াম, এসএস দিয়ে বিমানটি তৈরি করা হয়। বিমানটির ওজন হয়েছে ১০০ কেজি। গতি পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে একটি ডিজিটাল মিটার, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে পাখা তৈরি করা হয়েছে। ইঞ্জিন চলবে অকটেন অথবা পেট্রল দিয়ে। ঘণ্টায় গতি হবে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার।’

জুলহাসের দাবি, তার আগে কেউ বাংলাদেশে নিজে বিমান তৈরি করে আকাশে উড্ডয়ন করাতে পারে না নাই। অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন, তবে সফল হননি। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণার কাজ করার আগ্রহ আছে জুলহাসের। সেই সঙ্গে একটি ওয়ার্কশপও করতে চান তিনি। বাণিজ্যিকভাবে বিমান তৈরি করে দেশের স্বার্থে কাজ করতে চান এ তরুণ তুর্কি।  

এ তরুণ উদ্ভাবকের সাফল্য, দক্ষতা আর অনুপ্রেরণার গল্প এখন হাজারো তরুণের পথের পাথেয় হয়ে থাকবে। স্বপ্নবাজ এ তরুণের স্বপ্ন একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বাংলাদেশের প্রতিভাবান তরুণদের জন্য একটি নতুন দিকের দ্বার উন্মোচন করবে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!