বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ; এ দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবিকার সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তাই সে সম্পর্কের হাল ধরেই নির্বিকার খেটে যাচ্ছে কৃষক সম্প্রদায়। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করছে নানারকম চ্যালেঞ্জ। যেখানে অন্যতম উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সেচ ব্যবস্থার খরচ এবং পানি সংকট। ধানের জমিতে পানির চাহিদা মিটাতে যেয়ে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয় বাংলার কৃষকের।
তবে এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য আধুনিক কৃষিতে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতিকে এক যুগান্তকারী কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এটি এমন এক পদ্ধতি যা ধানের জমিতে সেচ ব্যবস্থার খরচ কমিয়ে আনতে পারে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি। শুধু তাই নয়, এই পদ্ধতি, পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি কমায় পরিবেশগত প্রভাব। যেখানে মাটির স্বাস্থ্যকে উন্নত করে জমির অগভীর পানির স্তরকে বজায় রাখে, যা পরবর্তীতে ফসলের বৃদ্ধি এবং মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
এ ছাড়াও, এটি গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সাহায্য করে, ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এই পদ্ধিতি কৃষকের জন্য ধান চাষে ব্যবহৃত দীর্ঘমেয়াদি কৃষির টেকসই উন্নয়ন এবং পানি সাশ্রয়ের একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে ধারণা করছেন তারা। এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুর রহমান।
তিনি বলেন, এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি হলো ভেজা এবং শুষ্ক পদ্ধতি বা ম্যাজিক পাইপ ম্যাথট পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ চাষের ক্ষেত্রে জমিতে সার্বক্ষণিকভাবে পানি না রেখে পর্যায়ক্রমে জমি ভেজা ও শুষ্ক পদ্ধতি অনুসরণ করা। জমির পর্যায়ক্রমে ভেজা ও শুষ্ক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ধান চাষে একবার সেচ দিয়ে পরবর্তী সেচের সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য জমিতে ছিদ্রযুক্ত পাইপ বা পর্যবেক্ষণ নল বসাতে হয়। এ পাইপে পরবর্তী নির্দিষ্ট লেভেলে পানি নেমে গেলে সেচ দিতে হয়।
এতে করে কৃষকের প্রতিদিন পানি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যার ফলে বর্তমানে ধান চাষের প্রচলিত সেচ পদ্ধতি থেকে এডব্লিউডি পদ্ধতি প্রায় ৪০% পানি সাশ্রয় করে। এ সেচ পদ্ধতি এখন কিছু কিছু অঞ্চলে সীমিত আকারে ব্যবহৃত হলেও, এর কার্যকারিতা এবং সুবিধার কারণে ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরও ব্যাপক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা যায়, এডব্লিউডি বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি সঠিকভাবে এবং সচেতনভাবে ব্যবহার করা যায়।’