ঢাকা শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

সামজ ভাইয়ের স্বপ্ন ও সাফল্যের গল্প

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৫:০০ পিএম
ছবি: সৌজন্য

স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবে রূপ দেওয়া পর্যন্ত সময়টা এমন এক যাত্রা, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ এক নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। জীবনের পথ কখনো মিষ্টি আবেগে পূর্ণ, আবার কখনো কঠিন সংগ্রামের মধ্যে কাটে। তবে, পরিবর্তন তখনই আসে যখন নিজের শক্তি এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা যায়। বর্তমান সময়ের শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী সামজ ভাইয়ের জীবন এমনই এক সংগ্রামের গল্প; যেখানে শৈশবের এক চিরন্তন স্বপ্ন তাকে আজকের সফল জায়গায় নিয়ে এসেছে। তরুণ এই সংগীতশিল্পীর স্বপ্নযাত্রা নিয়ে জানাচ্ছেন- মির্জা হাসান মাহমুদ

ছোটবেলা থেকেই গান ছিল সামজ ভাইয়ের জীবনের অন্যতম ভালোলাগার জায়গা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খুব ছোট বেলায়ই স্বপ্ন দেখতাম একদিন বড় সংগীতশিল্পী হবো। এই স্বপ্ন তখনই তৈরি হয়, যখন ছোটবেলা থেকেই জীবনকে খুব কাছ থেকে চিনতে শুরু করি। আর তখনই মনে হতো আমাকে বড় হতেই হবে। এবং আমি খুঁজে বের করলাম, আমি গান গাইতে পারি।’ এটি ছিল এক অবচেতন উপলব্ধি, যা তার মনকে গানের দিকে ধাবিত করেছিল। জীবনের প্রথম থেকেই তিনি অনুভব করেছিলেন, তার পথ গানের পথ।

কিন্তু, এ স্বপ্ন পূরণের পথ তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার পথে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তার। তার ভাষায়, ‘গান রেকর্ডের জন্য অর্থের জোগান এবং মানসিক সহায়তা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ গ্রামের জীবনে এগুলো অনেকটাই অপ্রাপ্তির মতো ছিল, কিন্তু তার দৃঢ় সংকল্প তাকে থেমে যেতে দেয়নি। দেশে ব্যতিক্রমী স্বপ্নবাজদের মূল্যায়ন হয় না সে রকমভাবে। সেই বিবেচনায় সুদূর গ্রামে থেকে কারো সহযোগিতা না পাওয়া একজন মানুষের পক্ষে এমন স্বপ্ন পূরণ করা চ্যালেঞ্জিংই বটে।

এত সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সামজ ভাই থেমে যাননি। তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল মানুষের ভালোবাসা, যেটি তাকে সত্যিকার অর্থে স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। মানুষের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং তাদের জীবনে পরিবর্তন আনার অনুভূতি ছিল তার সবচেয়ে বড় সাফল্য। তার গানের প্রতি মানুষের এ সাড়া ছিল তার সংগ্রামের সেরা পুরস্কার, যা তার চলার পথে মনোবলকে আরও শক্তিশালী করেছে।

তবে, শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা তার জীবনের লক্ষ্য নয়। সংগীতের সঠিক মূল্যায়ন এবং যোগ্য শিল্পীদের স্বীকৃতির বিষয়টিও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদি সব বাধা দূর করা যেত, তাহলে সংগীত নিয়ে কী করতে চাইতেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি সব বাধা দূর করা যেত, তাহলে সঠিক এবং যোগ্যদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করতাম।’ তিনি বিশ্বাস করেন, সংগীতকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত এবং এতে কোনো ধরনের বাধা থাকা উচিত নয়।

আলোচনার একপর্যায়ে সাফল্যের প্রসঙ্গ আসলে জানা জায়, গান ভালোবেসে এ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ট। আর ভবিষ্যতের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল খুবই নিরাসক্ত। তার কথায়, ‘ভবিষ্যৎ মানেই ইল্যুশন’, অর্থাৎ ভবিষ্যতের পরিকল্পনা যতই করা হোক, বাস্তবে তা শুধু এক স্বপ্নের মতো।

যারা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সাহস পায় না; তাদের জন্য ‘মনীষারা বলেন যেটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা হয় সেটা স্বপ্ন নয়, যা ঘুমাতে দেয়না তাই স্বপ্ন। জীবনের পথে যতই বাধা আসুক, মানুষকে তার স্বপ্নের জন্য লেগে থাকতে হবে। হাল ছেড়ো না, নিজেকে বিশ্বাস করো, এবং নিজের স্বপ্নকে লালন করো’ এটাই ছিল তার বার্তা।

সামজ ভাইয়ের জীবন সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসার এবং সংগ্রামের গল্প। এ গল্প আমাদের একটি চিরন্তন শিক্ষা দেয়; তা হলো- কখনো হারিয়ে না গিয়ে, সংকল্প ও বিশ্বাসের মাধ্যমে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।