ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

ফাগুনে সৌন্দর্যের আগুন লাগে

মতিউর রহমান মুন্না

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম

ফাগুনে সৌন্দর্যের আগুন লাগে

ছবি: সংগৃহীত

এবার দেশে ফেরার আগেই অনেক পরিকল্পনা ছিল বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেক জায়গায় ভ্রমণে যাব। কিন্তু দেশে এসে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে আর তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। সব শেষে এবার মোটরসাইকেল দিয়ে হাওর-বাঁওড় ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলা ভ্রমণের পরিকল্পনা হলো। ৫টি মোটরসাইকেল যোগে সকাল ঘটিকায় ১০ জন বন্ধু মিলে যাত্রা শুরু করলাম সুনামগঞ্জে।

যাত্রায় পাহাড় ঘেঁষা সড়ক ও খেয়ায় যাদুকাটা নদী পার হয়ে বালু পথে পৌঁছে গেলাম শিমুল বাগান।  সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা তীরে সারিবদ্ধভাবে লাগানো শিমুল গাছগুলোয় ফুটে থাকা শিমুলের লাল পাপড়ি দেখে বন্ধুরা গেয়ে উঠল বসন্তের গান ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে।’ শিমুল ফুলের রক্তিম আভা বাতাসে দোল খাচ্ছে যাদুকাটা নদীর তীরে শিমুল বাগানটিতে। হাওর, পাহাড়, নদীর পাশেই এখন নতুন আকর্ষণীয় এই স্থানে লালে লাল শিমুল বাগান।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন- শিমুল বাগানে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করে। লাল ফুলের কল্যাণে পুরো এলাকায় হয়ে ওঠে রক্তিম আভা। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপারে শিমুল বাগান। হাজারো ডালে ফুটে থাকা ফুল মনকে রাঙিয়ে দিয়েছে। ‘বসন্ত আজ এলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে’- কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতোই সুনামগঞ্জের শিমুল বাগানে টকটকে লাল শিমুল ফুলের রক্তিম আভা।

তথ্য সূত্র বলছে- সুনামগঞ্জের বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বৃক্ষপ্রেমী মরহুম জয়নাল আবেদীন এই বাগানের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০২ সালে তিনি উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামের পাশে যাদুকাটা নদী সংলগ্ন ৯৮ বিঘা অনাবাদি বালুকাময় জমিতে সারিবদ্ধভাবে ৩ হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপণ করেন। এক যুগেরও বেশি সময় পর সেই শিমুল চারাগুলো এখন পুষ্প-পত্র-পল্লবে মুখরিত। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। শিমুল বাগানের সঙ্গে লেবুর বাগানও গড়ে উঠেছে। যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই শিমুল বাগানই দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান। এখন পুরো এলাকাজুড়ে টকটকে লাল শিমুল ফুল দেখা যায়। পুরো এলাকায় যেন রক্তিম আভা। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী, এপারে শিমুল বাগান।

সব মিলেমিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মানিগাঁও এলাকার শিমুল বাগানটি ঘুরে দেখা যায়, বাগানটি এখন ফুলে ফুলে লাল হয়ে আছে। লাল পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় যেন পর্যটকদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। ফাল্গুন আসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পর্যটকরা যাওয়া শুরু করেন। শিমুলের সেই রঙে মন রাঙিয়ে ভালোবাসা দিবস আর ফাল্গুন উদযাপন করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান সুনামগঞ্জের হাজি জয়নাল আবেদিন শিমুল বাগানে। প্রায় ১৫ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে রাতে ফিরে এলাম প্রাণের শহর নবীগঞ্জে।

আরবি/এসএম

Link copied!