জহির আজকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি মহাস্থানগড়ে আসছে। আমি আগে থেকে জানতাম যে এর পূর্ব নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর। একসময় মহাস্থানগড় বাংলার আদি শাসক মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল তাদের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে। ইতিহাস মতে এক হাজার থেকে এগার সালের দিকে সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন নাকি এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সঙ্গে।
এ সময় ভারতের দক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে আসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। জহির ইতিহাস ঘেটে জানতে পারে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। এলাকায় আরও কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি পরশুরামের সঙ্গে ফকির বেশি আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রঃ) এর যুদ্ধ হয় সালে এবং যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
এখানে আরও কিছু দেখার আছে যেমন মাহী সওয়ার মাজার শরীফ; পীরজাদা হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রঃ) কে কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজার শরীফটি গড়ে ওঠেছিল। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায়, হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন।
তিনি পুত্রসন্তান মানত করে গরু কোরবানি দেওয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তাকে বলির আদেশ দেন । তাই তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহণ করে মাহী সওয়ারের আগমন ঘটে। আরও দেখলাম কালীদহ সাগর; মহাস্থাগড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দুর্গ রয়েছে। এর পর আসলাম শীলাদেবী ঘাটে মহাস্থানগড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’।
শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতিবছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে। তারপর ঘুরতে গেলাম জিউৎকুন্ড কুপ; মহাস্থান গড়ের শীলাদেবীর ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। মহাস্থানগড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে অবস্থিত আছে। মহাস্থানগড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে।
আপনার মতামত লিখুন :