ঢাকা শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫

ব্যবহার কমছে ভয়েস মেইল-এমএমএসের

শাওন সোলায়মান
প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
ছবি: ইন্টারনেট

দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই পছন্দের দুইটি সেবা ছিল ‘ভয়েস মেইল’ এবং ‘মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সার্ভিস’ বা ‘এমএমএস’। বাংলাদেশের নব্বই এর দশকের কিশোর-কিশোরীরা যখন তাদের জীবনের প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে, তাদের কাছেও আবেগের নাম ছিল এই দুই সেবা, বিশেষ করে এমএমএস। 

ফিচার মোবাইল হ্যান্ডসেটে যখন শুধু ভয়েস কল অথবা ১৬০ ক্যারেক্টারের খুদেবার্তা পাঠানো যেত, তখন বাজারে আসতে শুরু করে রঙ্গিন ডিসপ্লের হ্যান্ডসেট। মূলত এসব ডিভাইসেই আদান প্রদান করা যেত এমএমএস। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব তথা প্রিয় মানুষদের মাঝে ভয়েস মেইল এবং এমএমএস হয়ে উঠেছিল জনপ্রিয় এক সেবা। তবে প্রযুক্তির বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই সেবাগুলোর ব্যবহার খুবই কমে এসেছে। মোবাইল ব্যবহারকারী এবং বর্তমান সময়ের অন্য ফিচারের তুলনায় এই সেবাগুলোর ব্যবহার এখন খুবই নগণ্য। 

সম্প্রতি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর বাংলালিংক ভয়েস মেইল এবং এমএমএস বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। ভয়েস মেইল সার্ভিস বা ভিএমএস এর মাধ্যমে একজন মোবাইল ব্যবহারকারী অপর প্রান্তের ব্যবহারকারীর জন্য একটি অডিও বার্তা রাখতে পারেন। অপর প্রান্তের ব্যবহারকারী অন্য কোনো কলে থাকলে বা ফোন রিসিভ না করলে বা তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকলে, কল দেওয়া ব্যবহারকারীরা সেই অডিও কল সংরক্ষণের সেবা নিতে পারেন। 

এজন্য আলাদা করে মোবাইল ডেটা বা ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়াও শুধু মেসেজ আকারেও ভয়েস বার্তা পাঠানো যায়। চিত্রনায়িকা দীঘির শিশুশিল্পী হিসেবে গ্রামীণফোনের জন্য করা ‘বাবা জান আমাদের আমাদের একটা ময়না পাখি আছে না!’ টিভি বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে এই সেবা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মাঝে। অপরদিকে, এমএমএস এর মাধ্যমে এসএমএস এর মতো টেক্সট মেসেজের পাশাপাশি ছবি, অডিও, ভিডিও এবং অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট পাঠানো যায়।

তবে আধুনিক প্রযুক্তির সৃজনশীল এবং আরও সহজতর সমাধানে ব্যবহারকারীদের মাঝে চাহিদা কমতে থাকে ভয়েস মেইল এবং এমএমএসের। একটি মোবাইল অপারেটরের সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৪০টি ভিএমএস এবং ৮০টি এমএমএস সফলভাবে ডেলিভারি হয়। 

অপারেটরটির ব্যবহারকারীদের নেওয়া ভিএমএস এবং এমএমএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা যতটা বাড়ছে, সেই তুলনায় ভিএমএস সেবার প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও, সেই তুলনায় ভিএমএস হিট কাউন্ট কম। 

একই অবস্থা এমএমএসের ক্ষেত্রেও। গত ডিসেম্বরে ওই অপারেটরের গ্রাহকদের মাঝে ভিএমএসের সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা ছিল ৭৫৫; তবে হিট কাউন্ট ছিল মাত্র ১৯৬টি। একইভাবে গত ৩১ ডিসেম্বর গ্রাহকরা ৩০২টি এমএমএস আদানপ্রদানের চেষ্টা করেছেন তবে সফলভাবে ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ১১৬টি। 

টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সেবার তুলনায় বর্তমানে অনেক আধুনিক, সাশ্রয়ী এবং তুলনামূলক ফিচার এসেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেটের কল্যাণে এ ধরনের সেবার জন্য ব্যবহারকারীদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে না। স্মার্টফোনের বিস্তারের কল্যাণে মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা ভিডিও কল, ভিডিও গ্রুপ চ্যাট, তাৎক্ষণিকভাবে ছবি, অডিও এবং ভিডিও’র মতো কনটেন্ট দ্রুত শেয়ারিংসহ সব ধরনের ফাইল দ্রুত আদান প্রদান করছে। 

ফলে চাহিদা কমেছে ভয়েস মেইল এবং এমএমএসের মতো সেবার। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাশফিয়া শ্রাবন্তী শান্তা বলেন, এখন তো হোয়াটস অ্যাপ বা মেসেঞ্জারেই বেশি কথা হয়, মোবাইলে কথা হয় না বললেই চলে। হোয়াটস অ্যাপ বা মেসেঞ্জারে ছবি, ভিডিও খুব দ্রুত শেয়ার করা যায়। 

আলাদা করে ভয়েস পাঠানো যায়। চাইলে ভিডিও কল বা গ্রুপ কলও করা যায়। এমন ফিচার থাকতে আর ভয়েস কল বা এমএমএসের দরকার পড়ে না। ভয়েস মেইল বা এমএমএসের জন্য টাকা লাগে। আর ওই সেবাগুলো তো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ফ্রি।

সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজমের সাধারণ সম্পাদক এবং টেলিকম সাংবাদিক সাইফ আহমাদ ইনফোটেককে বলেন, এখনো মনে আছে, স্কুলে থাকতে প্রথম বাবার মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিলাম। কলেজে উঠে আমার নিজেরই একটা মোবাইল ফোন হয়। কিশোর বয়সে মুঠোফোন থাকাটাই বড় বিষয় ছিল। 

তারপর যখন রঙ্গিন ডিসপ্লের হ্যান্ডসেট আসলো, তখন এমএমএসের ব্যবহার বাড়ল। তবে বর্তমানে ইমেইল, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং ক্লাউড সেবার মতো নতুন প্রযুক্তিগত সেবা এখনকার ব্যবহারকারীদের কাছে বেশি প্রিয়। 

এই অ্যাপলগুলোর মাধ্যমে দ্রুত এবং কার্যকরী যোগাযোগ করা হয় যা ভিএমএস এবং এমএমএসের স্থান দখল করেছে। ফলে মোবাইল কোম্পানিগুলো এসব সেবা থেকে সরে আসছে। 

জানা যায়, বাংলালিংকের আগে গ্রামীণফোনও এই সেবাগুলো বন্ধ করেছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভয়েস মেসেজ এবং এমএমএস সেবা বন্ধ করেছে গ্রামীণফোন। আরেক অপারেটর রবি’ও এমএমএস সেবা বন্ধ করেছে। তবে সীমিত পরিসরে চলছে ভয়েজ মেসেজ সেবা।