শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ, প্রভাব ও করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ, প্রভাব ও করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

নারীদের জীবনে মাসিক (পিরিয়ড) একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি। তবে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ, এর প্রভাব এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পিরিয়ডের গুরুত্ব

পিরিয়ড হল নারীর প্রজনন ব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক চক্র, যা সাধারণত ২৮-৩৫ দিন অন্তর ঘটে। এটি জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) প্রতিমাসে ঝরে পড়ার একটি প্রক্রিয়া, যা নারীর শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। পিরিয়ড না হওয়া বা অনিয়মিত পিরিয়ড নারীর প্রজনন ক্ষমতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পিরিয়ডের স্বাভাবিক চক্র

প্রতি মাসে নারীর দেহে কিছু হরমোনের ওঠানামা ঘটে, যা ডিম্বাণু উৎপাদন ও জরায়ুর আস্তরণ তৈরি করতে সাহায্য করে। পিরিয়ড সাধারণত চারটি পর্যায়ে বিভক্ত:

  • মেনস্ট্রুয়াল ফেজ (Menstrual Phase) – জরায়ুর আস্তরণ ঝরে পড়ে এবং রক্তস্রাব হয় (৩-৭ দিন)।
  • ফলিকুলার ফেজ (Follicular Phase) – ডিম্বাণু পরিপক্ক হয় এবং জরায়ুর আস্তরণ পুনরায় গঠিত হয়।
  • ওভ্যুলেশন ফেজ (Ovulation Phase) – পরিপক্ক ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বের হয় (চক্রের মাঝামাঝি সময়ে, সাধারণত ১৪তম দিনে)।
  • লুটিয়াল ফেজ (Luteal Phase) – ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে শরীর হরমোন কমিয়ে দেয় এবং পরবর্তী মাসিকের প্রস্তুতি নেয়। 

যদি কোনো কারণে এই স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটে, তবে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা অনিয়মিত হতে পারে।

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ

হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল—
গর্ভধারণ
সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল গর্ভধারণ। যদি পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় এবং আগে থেকেই যৌনসম্পর্ক করে থাকেন, তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
চরম মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।
হরমোনজনিত সমস্যা
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), থাইরয়েডের সমস্যা, প্রোল্যাকটিন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ।
বেশি বা কম ওজন
বডি মাস ইনডেক্স (BMI) খুব বেশি বা খুব কম হলে শরীরের হরমোন ব্যালান্স নষ্ট হয়, যা পিরিয়ড বন্ধের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ডায়েটিং বা বেশি ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম
অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কঠোর শরীরচর্চা শরীরের এস্ট্রোজেন মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, যা পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা ওষুধের প্রভাব
কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ইনজেকশন শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে, যা পিরিয়ড বন্ধ বা অনিয়মিত হওয়ার কারণ হতে পারে।
প্রাথমিক মেনোপজ বা সময়ের আগেই মেনোপজ শুরু হওয়া
কিছু নারীর ক্ষেত্রে ৪০ বছরের আগেই মেনোপজ (Menopause) শুরু হতে পারে, যাকে প্রাথমিক মেনোপজ বলা হয়। এটি পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা ও চিকিৎসা
ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ক্যান্সার বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা থাকলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা কেমোথেরাপিও এটির কারণ হতে পারে।

পিরিয়ড বন্ধ হলে করণীয়

  • প্রথমে গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন।
  • দীর্ঘ সময় ধরে পিরিয়ড না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন এবং প্রচুর পানি পান করুন।
  • মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা রিল্যাক্সেশন পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
  • অতিরিক্ত ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  • যদি PCOS বা থাইরয়েড সমস্যা থাকে, তবে নিয়মিত চিকিৎসা নিন।
  • ওজন খুব বেশি বা খুব কম হলে তা স্বাভাবিক মাত্রায় আনার চেষ্টা করুন।

মাসিকের সময় নারীদের জন্য উপকারী খাবার

মাসিকের সময় নারীরা পেটব্যথা, ফোলা ভাব, ক্লান্তি, ও মুড সুইং এর মতো সমস্যার সম্মুখীন হন। সঠিক খাবার গ্রহণ করলে এই উপসর্গগুলি হ্রাস পেতে পারে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।  

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার (রক্তস্বল্পতা দূর করতে)
মাসিকের সময় শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়, যা আয়রনের ঘাটতি ও দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।  
- সবুজ শাকসবজি (পালং শাক, ক্যালি, সরিষা শাক)  
- লাল মাংস (গরু, খাসির মাংস)  
- কলিজা (গরু বা মুরগির)  
- ডাল ও বিচি (মসুর ডাল, ছোলা, মটর)  
- কুমড়ার বীজ ও তিল
- সয়াবিন ও টোফু

পরামর্শ: আয়রন শোষণ বাড়ানোর জন্য ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার (কমলা, লেবু, টমেটো) খাওয়া উচিত।  

ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে)
ম্যাগনেসিয়াম পেশি শিথিল করতে ও পেটব্যথা কমাতে সাহায্য করে।  
- ডার্ক চকলেট (৭০% কোকো বা তার বেশি)
- কলা
- বাদাম (কাজু, কাঠবাদাম, আখরোট)
- অ্যাভোকাডো
- সবুজ শাকসবজি

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (সুজ ও ব্যথা কমাতে)
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ ও মাসিকের ব্যথা কমায়।  
- মাছ (স্যালমন, সার্ডিন, ম্যাকেরেল)
- চিয়া ও ফ্ল্যাক্সসিড (তিসির বীজ)
- আখরোট

পানিযুক্ত খাবার (ডিহাইড্রেশন ও ফোলা ভাব কমাতে)
শরীরে পানি স্বাভাবিক রাখতে এবং ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে।  
- শসা ও সেলারি
- তরমুজ ও কমলা 
- ডাবের পানি (প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ)  
- ভেষজ চা (ক্যামোমাইল, পুদিনা, আদা – ব্যথা ও গ্যাস কমায়)  

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (হজমে সহায়ক ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে)
কিছু নারীর বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, যা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে কমতে পারে।  
- ওটস ও পূর্ণ শস্য (কুইনোয়া, ব্রাউন রাইস, আটার রুটি)
- ফল (আপেল, নাশপাতি, বেরি জাতীয় ফল)
- ডাল ও মটরশুটি

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (মুড সুইং ও পেশি ব্যথা কমাতে)
ক্যালসিয়াম পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপ কমায় ও পেশির খিঁচুনি দূর করতে সাহায্য করে।  
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য (দই, পনির)
- সয়াবিন ও টোফু
- ক্যালসিয়ামযুক্ত বাদাম দুধ (আমন্ড, সয়ামিল্ক)
- ব্রকলি ও পালংশাক

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (শক্তি বৃদ্ধি ও হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে)
প্রোটিন শক্তি সরবরাহ করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।  
- ডিম
- চিকেন ও টার্কি
- গ্রিক দই
- ডাল ও শিমজাতীয় খাবার

এ সময় যে খাবারগুলো এড়ানো উচিত

  • লবণযুক্ত খাবার→ ফোলা ভাব বাড়ায় (আলুর চিপস, প্রসেসড খাবার)  
  • চিনি বেশি আছে এমন খাবার→ ইনসুলিনের তারতম্য ঘটায় (মিষ্টি, সফট ড্রিংক)  
  • ক্যাফেইন→ উদ্বেগ ও ব্যথা বাড়াতে পারে (চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক)  
  • অ্যালকোহল→ ডিহাইড্রেশন ও মুড সুইং বাড়ায়  

গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • প্রচুর পানি ও ভেষজ চা পান করুন  
  • ছোট ছোট মিল খেতে চেষ্টা করুন যেন শক্তি বজায় থাকে  
  • প্রদাহনাশক খাবার খান যেন পিরিয়ডের ব্যথা কমে  

সঠিক খাবার গ্রহণ করলে পিরিয়ডের সময় শরীর ও মন ভালো থাকবে এবং উপসর্গগুলো সহজে সামলানো যাবে!

পিরিয়ড বন্ধ হওয়া সবসময়ই ভয়ের কারণ নয়, তবে এটি কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে মাসিক বন্ধ থাকলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করে এবং শরীরের প্রতি যত্নশীল থেকে আমরা আমাদের পিরিয়ড চক্রকে স্বাভাবিক রাখতে পারি।

আরবি/এসএস

Link copied!