ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আর এই খুশি ও আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়ি ফিরেন মানুষ। প্রতিবছর ঈদের এই সময়টায় আনন্দ ভাগ করে নিতে মানুষের কি ছুটে চলা, কত ভোগান্তি। কিন্তু বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনের মুখ দেখলে হৃদয়ের নদীতে শুরু হয় বাধ ভাঙা আনন্দ আর উল্লাস। কিন্তু কখনো কখনো এই আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়। একটু অসাবধানাতার দাম দিতে হয় সারা জীবন। তাই সচেতনতার সাথে করতে হবে সব। উচ্ছ্বাসের এই দিনগুলোর আবেগ নিয়ে লিখেছেন মির্জা হাসান মাহমুদ
এক মাস রোজা শেষে ঈদ আসে উচ্ছ্বাসের বার্তা নিয়ে, আর এই উচ্ছ্বাস পূর্ণতা পায় প্রিয়জনের সান্নিধ্যে। ঈদের সবচেয়ে রঙিন দিক হলো নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। শহরের কোলাহল, ব্যস্ততা, যানজট সবকিছু পেছনে ফেলে হাজারো মানুষ ছুটে চলে শেকড়ের টানে। স্টেশনে, বাস টার্মিনালে, লঞ্চঘাটে মানুষের স্রোত; যেন প্রতিটি হৃদয়ই অপেক্ষায় থাকে চেনা উঠোনে পা রাখার জন্য। পথ যত দীর্ঘই হোক, গন্তব্যে পৌঁছানো চাই-ই চাই।
এই গন্তব্য বলতে আমরা বুঝি শৈশবের উঠোন, মায়ের স্নেহমাখা রান্নাঘর, বাবা-মার প্রশান্ত মুখ আর হারিয়ে যাওয়া দিনের গল্প ফিরে পাওয়ার তীব্র আবেগ। ঈদে বাড়ি ফেরা যেমন শারীরিক যাত্রা, তেমনই আত্মার কাছে ফেরার মতো এক অনুভূতি। শত বাধা, শত ক্লান্তি থাকলেও, হৃদয়ের গভীরে একটাই কথা জাগে, তা হলো- ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি!’
ট্রেনের সিটে বসে জানালা দিয়ে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকা অথবা লঞ্চের ছাদে দাঁড়িয়ে নদীর বাতাসে মন হারিয়ে ফেলা কিংবা বাসের জানালায় মাথা ঠেকিয়ে চলার গতি অনুভব করা; এই ভ্রমণ জীবনের সবচেয়ে চেনা অদ্ভুত সুন্দর এক ভ্রমণ।
এই আনন্দযাত্রা যেন কষ্টের কোনো কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে থাকতে হবে সতর্ক। ঈদযাত্রায় ঠেলাঠেলি, অতিরিক্ত ভিড়, ট্রাফিক জ্যাম সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে ভ্রমণ হতে পারে অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। যাত্রার আগে পরিকল্পনা করা জরুরি; কোনো যানবাহনে যাবেন, টিকিট আগেভাগে নিশ্চিত করেছেন কি-না, বাড়িতে যারা আছে কার জন্য কী কী নেবেন, যাত্রার সময় সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে কি-না।
যাত্রাপথে অপরিচিত কারো দেওয়া কোনো খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা যাবে না। বিশেষ করে ট্রেনে, লঞ্চে বা বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা থাকে, তাই সদা সতর্ক থাকতে হবে। যাত্রাপথে নিজের মালপত্রের প্রতি বাড়তি নজর দিন। মোবাইল, মানিব্যাগ, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিরাপদ স্থানে রাখুন।
যদিও দিনের বেলায় বেশিরভাগ লোকজন রোজা রাখেন, তবুও ইফতারের জন্য বা কেউ রোজা না রাখলে অথবা রাতে ভ্রমণ করলে খাবারের দিকে থাকতে হবে সতর্ক। শুকনো খাবার সঙ্গে রাখা ভালো। কারণ বাইরে তৈরি খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। পানির বোতল সঙ্গে রাখুন এবং অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। শিশুদের জন্য আলাদা খাবার নেওয়া প্রয়োজন, কারণ দীর্ঘ যাত্রায় তারা ঘন ঘন ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে।
ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সঙ্গে নিতে হবে, প্রয়োজনে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনও সঙ্গে রাখুন। যদি গর্ভবতী কেউ ভ্রমণ করেন, তাহলে প্রথম ছয় মাস নিরাপদ হলেও শেষ তিন মাসের মধ্যে ভ্রমণ না করাই ভালো।
এ ছাড়া, গ্রাম আর শহরের আবহাওয়ার পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, তাই মানসিক প্রস্তুতি থাকা চাই। গ্রামে ফিরে শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। গ্রামের বাড়ির আশপাশে পুকুর, খাল-বিল থাকলে বাচ্চাদের একা একা ছাড়া যাবে না। বয়স্কদের জন্যও সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা জরুরি। যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তা যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে সঙ্গে থাকে। ঈদের আনন্দ যেন কোনো দুর্ঘটনায় ম্লান না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু গ্রামে ফেরার প্রস্তুতিই নয়; ঈদ শেষে শহরে ফিরে এসে যেন অপ্রত্যাশিত কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। বাড়ি ছাড়ার আগে সব বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ করা, গ্যাসের চুলা চেক করা, দরজায় তালা ঠিকভাবে লাগানো, মূল্যবান জিনিস নিরাপদে রাখা; এসব বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। যদি সম্ভব হয়, নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশীদের জানিয়ে যাওয়া ভালো।