‘মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী’—সুনীলের কবিতার মতো পাহাড়ের চূড়ায় বসে এমন চরাচরে তীব্র নির্জনতায় হারিয়ে যেতে কার না ইচ্ছে করে? কিন্তু মোটা অঙ্কের বাজেট কিংবা সময় স্বল্পতা আমাদের আটকে রাখে নিরাশার টাইম মেশিনে। আর আমাদের দুরন্ত মন তসবি জপে একটু ফুরসতের অপেক্ষায়। অপেক্ষার পালা শেষ, বাৎসরিক কর্মব্যস্ততাকে সাময়িক বিদায় জানাতে আসছে ঈদুল ফিতর। সারা বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে নিতে এ সময়ে ঘুরে আসতে পারেন পাহাড়ে। চিন্তা নেই! মাত্র পাঁচশ টাকায় পাহাড় ভ্রমণের আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন আরফান হোসাইন রাফি
পাঁচশ টাকায় পাহাড় ভ্রমণ করতে আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে দুই রাত এক দিনের। আপনার সুবিধামতো যেকোনো দিন সন্ধ্যার পর ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে প্রতি সন্ধ্যায় দুটি ট্রেন ছেড়ে যায়—চট্টগ্রাম মেইল এবং কর্ণফুলী এক্সপ্রেস। আপনি যে গন্তব্যে যাবেন, সেই স্টেশনে মেইল ট্রেন ব্যতীত অন্য কোনো ট্রেন থামে না, তাই আপনাকে এই লোকাল ট্রেনকেই বেছে নিতে হবে।
শ্রেণিভিত্তিক ভাড়া পড়বে ৯০-২৮৫ টাকা। আপনি ১৫০ টাকার মধ্যে একটি মানসম্মত সিট পেয়ে যাবেন। সুবিধামতো একটি সিট দেখে উঠে পড়ুন। রাত ১১টা বাজলেই ট্রেন আপনাকে নিয়ে ছুটবে পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। সে সময় ব্যাগ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাবধানে রেখে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন। মাঝপথে আখাউড়া জংশনে মিনিট চল্লিশের যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়। তবে খুব জরুরি না হলে সেখানে নামার প্রয়োজন নেই। কেন প্রয়োজন নেই, সেটি সেখানেই গেলে আপনার ধারণা হয়ে যাবে। আপনি বরং কোনো হকারকে ডেকে একটু চা-বিস্কুট খেতে পারেন। খেয়ে-দেয়ে চোখ লেগে এলে আবারও একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। ভোরের আলো চোখে পড়তেই আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্নিগ্ধ হাওয়া। মুহূর্তেই আপনার মন-মেজাজ শীতল হয়ে ওঠবে।
ট্রেন থেকে নেমে ৩০ টাকায় নাস্তা সেরে ২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের গোড়ায়। সেখান থেকে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা ট্রেকিংয়ের পর চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন—একদিকে সমুদ্র আর অন্যদিকে পাহাড়ের নির্জনতা, পাহাড়ের ওপরে প্রাচীন মন্দির, আর চারদিকে চির সবুজের বাগান। এ ছাড়া দেখতে পাবেন ছোট-বড় ঝর্ণা যা আপনাকে নিয়ে যাবে সৌন্দর্যের অতল গহ্বরে।
এভাবে এক দুপুর কাটিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর আশপাশের জায়গাগুলো ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম এই তীর্থস্থানে চন্দ্রনাথ পাহাড় ছাড়াও পাবেন— খৈয়াছড়া ঝর্ণা, মহামায়া লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, কুমিরা ঘাট, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল, কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইল এবং সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। যেখানে আপনি হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির নিবিড় আলিঙ্গনে। তবে যেহেতু এক দিনে সবকিছু দেখা সম্ভব নয়, তাই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সঙ্গে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে পারেন। এভাবে একটি স্বর্গীয় ভ্রমণের পর বেলা শেষে সংক্ষিপ্ত একটা হিসাব কষে দেখলে কিছুটা বিস্মিত হবেন! দেখবেন, এখনো অর্ধেক টাকা রয়ে গেছে আপনার কাছে! যে টাকায় আপনি অনায়াসে একই উপায়ে আবার ফিরে যেতে পারেন বাড়িতে।
বি.দ্র. এই ভ্রমণটিতে প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত খরচ যোগ করা হয়নি। তাই প্রয়োজন অনুসারে খরচ কম-বেশি হতে পারে।