শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ১০:১২ এএম

মাসিক চক্র সম্পর্কে জানুন, সুস্থ থাকুন

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ১০:১২ এএম

মাসিক চক্র সম্পর্কে জানুন, সুস্থ থাকুন

ছবি: সংগৃহীত

মাসিক চক্র বা পিরিয়ড নারীদের শরীরের একটি স্বাভাবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা শুধু প্রজনন স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং সামগ্রিক সুস্থতার প্রতিচ্ছবি। অনেক সময় আমরা মাসিককে শুধু একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনা হিসেবে দেখি, কিন্তু এর সঙ্গে হরমোনের ভারসাম্য, মানসিক অবস্থা এবং দেহের অভ্যন্তরীণ সুস্থতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

অনেক নারী মাসিকের অনিয়মিততা, ব্যথা বা অন্যান্য অস্বস্তিকর লক্ষণের সম্মুখীন হন, যা খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তাই মাসিক চক্র সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই লেখায় আজ আমরা আলোচনা করবো মেয়েদের কেন মাসিক হয়, এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ, এ সময় সুস্থ থাকতে কীভাবে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, মাসিকের আগের ও চলাকালীন লক্ষণ কী হতে পারে, এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

কেন মাসিক হয়?

মাসিক বা পিরিয়ড হল মাসিক চক্রের একটি অংশ, যা একজন নারীর দেহকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। সাধারণত, এই চক্রটি ২৮ দিন স্থায়ী হয়, তবে অনেকের ক্ষেত্রেই তা ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে)। এ চক্রে নারীদের শরীরে যা ঘটে:  

ডিম্বনিঃসরণ (Ovulation): প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু বের হয়।  
গর্ভধারণের প্রস্তুতি: শরীর জরায়ুর (uterus) আস্তরণকে পুরু করে, যাতে ডিম্বাণুটি নিষিক্ত হলে তা সেখানে সংযুক্ত হতে পারে।  গর্ভধারণ না হলে: ডিম্বাণুটি নিষিক্ত না হলে, জরায়ুর আস্তরণ ভেঙে রক্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এটিকেই মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়।  

এই চক্রটি মেনোপজ (menopause) শুরু না হওয়া  পর্যন্ত চলতে থাকে, যা সাধারণত নারীদের জীবনে ৪৫-৫৫ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে।  

মাসিক কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মাসিক নারীদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি জরায়ুর পরিস্কার হওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। নিয়মিত মাসিক হওয়া মানে শরীর সুস্থভাবে কাজ করছে এবং হরমোনগুলোর সঠিক ভারসাম্য রয়েছে। এতে বুঝা যায় আপনার এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন সঠিকভাবে কাজ করছে।  

এটি নারীদের সন্তান ধারণের সক্ষমতার চিহ্ন, পাশাপাশি জরায়ুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে। মাসিকের মাধ্যমে জরায়ুর পুরনো আস্তরণ বের হয়ে যায়, যা দেহকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। অনিয়মিত বা ব্যথাযুক্ত মাসিক অনেক সময় স্ট্রেস, অপুষ্টি বা হরমোনজনিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিয়মিত মাসিক হওয়া একজন নারীর সামগ্রিক সুস্থতার প্রতিচ্ছবি।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সঠিক যত্ন নিলে মাসিকজনিত সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো যায়। এটি শুধু শারীরিক সুস্থতারই প্রতীক নয়, বরং নারীদের স্বাভাবিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা লজ্জার নয়, বরং গর্বের বিষয়।

মাসিক হল নারীদের সুস্থ প্রজনন স্বাস্থ্য ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকার একটি প্রমাণ। এটি নির্দেশ করে যে—  

নিয়মিত মাসিক সুস্থ শরীরের লক্ষণ, আর অনিয়মিত মাসিক স্ট্রেস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।  

মাসিকের সময় সুস্থ থাকতে করণীয়

মাসিক শুরু হলে মেয়েদের নিজেদের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করে এবং মাসিক চক্র সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে, প্রতিটি নারী তার শরীরের প্রতি আরও যত্নশীল হতে পারেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

  • স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রতি  ৪-৬ ঘণ্টা পরপর পরিবর্তন করুন।  
  • ট্যাম্পন বা মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে ৪-৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিবর্তন করুন বা পরিষ্কার করুন।  
  • হাল্কা গরম পানি দিয়ে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করুন।  

পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীর হাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করুন, এটি **ব্লোটিং (ফুলে যাওয়া)** কমায়।  

হালকা ব্যায়াম করুন
হাঁটা, ইয়োগা বা হালকা স্ট্রেচিং করলে ব্যথা কমে এবং মন ভালো থাকে।  

মাসিকের চক্র ট্র্যাক করুন
একটি পিরিয়ড ট্র্যাকার অ্যাপ বা ডায়েরি ব্যবহার করে আপনার চক্রের তারিখগুলো লিখে রাখুন।  

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
মাসিক চলাকালীন শরীর ক্লান্ত থাকে, তাই ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।  

নিয়মিত মাসিকের জন্য খাবার

সঠিক খাবার খেলে মাসিকের চক্র নিয়মিত থাকবে এবং ব্যথা কম হবে।  

যে খাবারগুলি মাসিক নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে:

  • ফল ও সবজি (কলা, কমলা, পালং শাক, গাজর) – ভিটামিন ও আয়রন সমৃদ্ধ।  
  • সম্পূর্ণ শস্য (ওটস, ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া) – হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।  
  • স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (এভোকাডো, বাদাম, তিল) – হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।  
  • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার (মসুর ডাল, লাল মাংস, ডিম, শাকসবজি) – রক্তে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।  
  • পর্যাপ্ত পানি ও ভেষজ চা– শরীর হাইড্রেটেড রাখে ও ব্যথা কমায়।  

যে খাবার এড়িয়ে চলা উচিত:

  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন (চা, কফি) – এটি ব্যথা বাড়াতে পারে।  
  • প্রসেসড ও জাংক ফুড – হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।  
  • অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার – ফুলে যাওয়া ও অস্বস্তি বাড়াতে পারে।  

মাসিকের আগে ও চলাকালীন সাধারণ লক্ষণ

অনেক নারী PMS (Premenstrual Syndrome) অনুভব করেন, যা মাসিক শুরু হওয়ার আগের কিছু লক্ষণ।  

মাসিকের আগের লক্ষণ (PMS Symptoms):

  • মুড পরিবর্তন, রাগ বা দুশ্চিন্তা  
  • পেট ফোলা বা পানি জমা  
  • স্তনে ব্যথা  
  • মাথাব্যথা বা পিঠে ব্যথা  
  • খাবারের প্রতি আকর্ষণ (বিশেষ করে মিষ্টি বা নোনতা খাবার)  

মাসিক চলাকালীন লক্ষণ:

  • তলপেটে ব্যথা  
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা  
  • বমি ভাব বা মাথা ঘোরা  

মাসিক সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

অনেকের মনেই একটি সাধারণ প্রশ্ন আসে, মাসিক চলাকালীন কি গর্ভবতী হওয়া সম্ভব? হ্যাঁ, যদিও এটি বিরল ঘটনা। যদি আপনার চক্র ছোট হয় বা অনিয়মিত হয়, তবে মাসিকের শেষের দিকে ডিম্বনিঃসরণ হলেও হতে পারে।  

অনিয়মিত মাসিক কি স্বাভাবিক? 
কিশোরীদের মধ্যে মাসিকের প্রথম কয়েক বছরে এটি স্বাভাবিক। তবে যদি অনেক লম্বা বিরতি থাকে, তবে ডাক্তার দেখানো উচিত।  

কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?

  • যদি মাসিক খুব বেশি ব্যথা দেয় এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়।  
  • যদি রক্তপাত ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়।  
  • যদি মাসিক অনিয়মিত থাকে (খুব দেরিতে আসে বা খুব ঘন ঘন হয়)।  


মাসিক হল নারীদের স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। সঠিক খাবার, শরীরচর্চা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে মাসিককে আরামদায়ক করা সম্ভব।  

প্রতিটি নারীর অভিজ্ঞতা ভিন্ন, তাই নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, মাসিক লজ্জার কিছু নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য ও নারীশক্তির একটি স্বাভাবিক চিহ্ন!

নিজের নারীত্বকে উপভোগ করুন! ভালো থাকুন!! 
 

আরবি/এসএস

Link copied!