ঢাকা বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫

ঈদ সালামি: ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতার দিকে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৫, ০৮:৩৩ এএম

ঈদুল ফিতরের এক অন্যতম প্রধান রীতি হচ্ছে ঈদ সালামি। এক মাসের কঠোর সিয়াম সাধনার পর মুসলিমরা ঈদের দিন পরস্পরের মধ্যে সালামি বা ঈদ উপহার হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান করেন।

 এটি শুধু একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের একটি উপায় নয়, বরং ঈদের আনন্দের ভাগীদার হিসেবে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের প্রতি সহানুভূতির প্রতীকও। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই প্রথা বিভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তবে এর মূল্য এবং তাৎপর্য একই রয়ে গেছে।

অতীতের ঈদ সালামি
ঈদ সালামির প্রচলন ইসলামের প্রাথমিক যুগে শুরু হয়। ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে সালামি হিসেবে সাধারণত খাদ্য সামগ্রী, ফলমূল বা প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস দেয়া হত। এছাড়া, বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজে ঈদের দিন পরিবার এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে খাবার, কাপড় বা অন্যান্য সামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়া হত। তবে নগদ অর্থ দেওয়ার রীতি তখনও বেশ প্রচলিত ছিল না।

বর্তমানের ঈদ সালামি
বর্তমানে ঈদ সালামির রীতি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। আধুনিক যুগে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, ঈদ সালামি হিসেবে নগদ অর্থ প্রদান একটি সাধারণ রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ছেলে, মেয়ে, ভাতিজা, ভাতিজি, বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রতিবেশী সবাই একে অপরকে সালামি হিসেবে টাকা প্রদান করে থাকে। এটি মূলত পারিবারিক আয় বা সম্পদ ভাগাভাগি করার এক ধরনের উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিশেষত, শিশুরা ঈদ সালামি থেকে আনন্দিত হয় এবং এর মাধ্যমে তারা ঈদের আনন্দ বেশি অনুভব করে। পরিবারের বড়রা সাধারণত ছোটদেরকে ঈদ সালামি দেন এবং এতে তারা নিজেদের দায়িত্ববোধও অনুভব করেন। 

এছাড়া, শহরাঞ্চলে কাজের মানুষদেরও ঈদ সালামি দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি হয়ে উঠেছে, যা তাঁদের জীবনের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তোলে।

ঈদ সালামি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
ঈদ সালামি শুধু একটি ঐতিহ্য নয়, এটি সামাজিক বন্ধন এবং অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সহায়তাও প্রদান করে। বিশেষত কম আয়ের মানুষ, কর্মচারী বা রিকশাচালকদের জন্য ঈদ সালামি একটি সহায়ক অর্থনৈতিক উপায় হিসেবে কাজ করে, যা তাঁদের ঈদের আনন্দকে আরেকটু বাড়িয়ে তোলে।

এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে সমাজে বৈষম্য দূরীকরণেও এটি সাহায্য করে। ঈদ সালামি প্রথা নিম্নবর্গের মানুষকে উপহারের মাধ্যমে সম্মান প্রদান এবং তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে। শহরাঞ্চলের অনেক অভিজ্ঞানী পরিবারও ঈদের দিন শ্রমিকদেরকে উপহার দিয়ে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার নিদর্শন রাখে।

ঈদ সালামির ভবিষ্যত
আগামী দিনে ঈদ সালামি হয়তো আরও ডিজিটাল বা প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠবে। মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই ঈদ সালামি প্রদান করা সম্ভব হবে। তবে, এর মূল উদ্দেশ্য-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা-কখনও পরিবর্তিত হবে না।

ঈদ সালামি এখনো আমাদের সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ, যা ঈদুল ফিতরের আনন্দকে আরও বৃদ্ধি করে এবং সম্পর্কের বন্ধনকে মজবুত করে তোলে।