কৃষি জগতে এক বিপ্লবের নাম জৈব কৃষি। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন উপাদানকে অগ্রাধিকার প্রদান করে মৃত্তিকা, কৃষি বাস্তুতন্ত্র ও মানুষের ক্ষতি ন্যূনতম করে দীর্ঘস্থায়ী বা টেকসই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য কৃষিতে এ পদ্ধতির ভূমিকা অতুলনীয়। তাই কৃষি গবেষকরা বলছেন, অচিরেই সারা দেশে জৈব কৃষির বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের কৃষি ফিরে পাবে তার সোনালি শোভা।কিন্তু কোথায় যেন একটা কিন্তু থেকেই যায়!
কৃষকের দেওয়া ভাষ্যমতে, জৈব কৃষি পরিবেশবান্ধব হলেও এই পদ্ধিতে চাষাবাদে ফলনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে লোকশানে পড়তে হবে এই ভয়ে অনেক কৃষক সাহস করতে পারছেন না এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের। তবে কৃষিবিদরা বলছেন, প্রাথমিক অবস্থায় ফলন কিছুটা কম হলে একটা সময় পর এর ফলন বাড়তে থাকে যা দীর্ঘমেয়াদি লাভের সম্ভাবনা বয়ে আনে। এ ছাড়া জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে একদিকে যেমন- কৃষকের চাহিদা মিটবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের রুচি ভালো পণ্যের দিকে ঝুঁকবে। ফলে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের কৃষি। তাই এ পদ্ধতি সারাদেশে বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন তারা। কিন্তু জনবহুল এই দেশে কীভাবে তা সম্ভব- এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি এবং কৃষি জমির পরিমাণ অনেক কম। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিনে দিনে আরও কমে যাচ্ছে। ফলে সারা দেশে জৈব কৃষি বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। তারপরও কৃষকেরা যদি চায়, কিছু উচ্চমূল্য ফসল, শাক-সবজি ফলমূল জৈব উপায়ে চাষ করতে পারে। সেগুলোর জন্য যা দরকার তা হলো, কৃষকের জৈব কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন ট্রেনিং নিতে হবে।
এই ট্রেনিং-এর মধ্য দিয়ে তারা বুঝতে পারবে জৈব কৃষির মাধ্যমে ফলন কমে না, কিংবা প্রাথমিক অবস্থায় কমলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফলন বাড়তে থাকে। তারপর আমদের ইনপুট সাপ্লাই আছে কিনা বা অন্যান্য জৈব বালাইনাশকগুলো বাজারে আছে কি-না তা খেয়াল রাখতে হবে এবং এগুলো কৃষকের জন্য ক্রয় সহজ করতে হবে। এছাড়া যেহেতু জৈব কৃষিতে প্রাথমিক অবস্থায় খরচটা একটু বেশি তাই জৈব কৃষির জন্য বিমা বা ব্যাংক লোন যদি ইনশিউর করা যায় তাহলে বাস্তবায়নটা সহজ হবে। এক্ষেত্রে সরকার পর্যায় থেকে প্রণোদনা দিলে এবং উৎপাদন থেকে বিক্রয়ের চেইনটা ঠিক থাকলে সারাদেশে জৈব কৃষি বাস্তবায়ন সম্ভব।’
আপনার মতামত লিখুন :