বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম

banner

আমের উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম

আমের উপকারিতা

কাঁচা বা পাকা আম ছবি: সংগৃহীত

বাইরে এখন তীব্র রোদের আঁচ। সঙ্গে গা পোড়ানো গরম। এ সময় কাঁচা আমের এক গ্লাস শরবত সারা শরীরে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। বাজারে এখন কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে। দামও নাগালে। কাজেই কাঁচা আমের শরবতে প্রাণটাকে শীতল আর শরীরটাকে চাঙা করার সুযোগ রয়েছে।

আম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী ফল, যা স্বাদের পাশাপাশি শরীরের জন্যও অনেকভাবে উপকারে আসে। এতে ভিটামিন এ, সি, ই, কে ছাড়াও রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

পুষ্টিবিদেরা বলেন, কাঁচা বা পাকা দুই ধরনের আমই শরীরের জন্য ভালো৷ আম কাঁচা বা পাকা যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, শরীরের জন্য এর কোনো নেতিবাচক দিক নেই বললেই চলে। কাঁচা আম বা আমের রসে পটাশিয়াম থাকায় প্রচণ্ড গরমে তা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। কাঁচা আমের গুণ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদেরা বলেন, ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকে ৪৪ ক্যালরি। এ ছাড়া ৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে। কাঁচা আমের আরও কিছু গুণের কথা জেনে নিন।

ইফতারে কাঁচা আমের শরবত
কাঁচা আমের শরবত

পুষ্টিগুণ

আমে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভিটামিন সি ও এ, পটাসিয়াম এবং ডায়েটারি ফাইবার।

ভিটামিন সি ও এ: আমে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সহায়ক। এছাড়া, ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

পটাসিয়াম: আমে পটাসিয়ামের পরিমাণও বেশ ভালো থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ডায়েটারি ফাইবার: আমে ডায়েটারি ফাইবার প্রচুর থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সহায়ক, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

এই সব পুষ্টি উপাদান মিলে আমকে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে গড়ে তুলেছে।

আমের শরবত – Bangla Recipe | বাংলা রেসিপি
পাকা আমের জুস

আম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
আমে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়া, এতে থাকা অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ শরীরের ফ্রি র‍্যাডিক্যালস কমাতে সাহায্য করে।

২. চামড়ার স্বাস্থ্য উন্নতি
আমের মধ্যে ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সহায়ক। আম ত্বকের দাগ কমাতে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সহায়তা করে।

phone
ত্বকের যত্নে আম

৩. দৃষ্টিশক্তি রক্ষা
আমে ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া, এটি ম্যাকুলার ডিজেনারেশন থেকে চোখকে রক্ষা করে।

৪. হজমের সহায়ক
আমে ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমের এনজাইমসমূহ প্রোটিন হজমে সহায়ক এবং পেটের সমস্যা কমাতে কার্যকর।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ
আম কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় এটি খেলে পেট ভরা অনুভূতি হয়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, আমের প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের প্রয়োজন কমায়।

৬. হার্টের স্বাস্থ্য উন্নতি
আমে পটাসিয়াম থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সহায়ক এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

৭. ক্যান্সার প্রতিরোধ
আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, পলিফেনলস কোলন ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।

৮. রক্ত শুদ্ধিকরণ
আমে ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ এর উপস্থিতি রক্তকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

৯. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
আমে ভিটামিন বি৬ থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি সেরোটোনিন এবং ডোপামিন উৎপাদন বাড়িয়ে মেজাজ উন্নত করতে সহায়ক।

১০. প্রদাহ কমানো
আমে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা প্রশমনে সহায়ক। এটি আর্থ্রাইটিস ও অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপশমে কার্যকর।

এই সব উপকারিতার জন্য আমকে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে আম খেলে শরীর সুস্থ ও সক্রিয় থাকে।

আম খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

১. রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি
আমে প্রাকৃতিক চিনি বেশি পরিমাণে থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

২. ওজন বৃদ্ধি
আমে ক্যালোরি এবং চিনি উচ্চ পরিমাণে থাকে। অতিরিক্ত আম খাওয়া ওজন বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে যদি নিয়মিত শরীরচর্চা না করা হয়।

৩. অ্যালার্জি ও সংবেদনশীলতা
কিছু মানুষের জন্য আম অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এতে ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি বা মুখে ফুলে যাওয়া দেখা দিতে পারে।

৪. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা
অতিরিক্ত আম খাওয়া গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ডায়রিয়া।

৫. ত্বকের সমস্যা
আমের খোসায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান সংবেদনশীল ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি ত্বকে জ্বালা, চুলকানি বা র‍্যাশ সৃষ্টি করতে পারে।

৬. পেস্টিসাইড ও রাসায়নিকের উপস্থিতি
অনেক সময় আমের চাষে পেস্টিসাইড ও রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই ধরনের আম খেলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করতে পারে।

৭. অতিরিক্ত ভিটামিন এ
অতিরিক্ত আম খেলে শরীরে ভিটামিন এ এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা হাড় ও যকৃতের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

৮. গরম প্রকৃতি
আম গরম প্রকৃতির ফল হওয়ায় অতিরিক্ত খেলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে শরীরের উষ্ণতা বাড়তে পারে এবং বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

৯. রক্তচাপ বৃদ্ধি
অতিরিক্ত আম খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে পারে, বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।

১০. কিডনির সমস্যা
অতিরিক্ত আম খেলে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অতিরিক্ত আম খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

১১. অতিরিক্ত ঘুম

অতিরিক্ত আম খেলে ঘুম বৃদ্ধি পেতে পারে। 

এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির জন্য আম খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণে এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যের উপকারিতা পাওয়ার জন্য এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচার জন্য সঠিক পরিমাণে আম খাওয়া প্রয়োজন।

আম প্রকৃতির একটি দান, যা আমাদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে, সঠিক পরিমাণে খাওয়া সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত আম খাওয়া যেমন ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ শর্করা গ্রহণ এবং হজমের সমস্যার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তেমনি অ্যালার্জি এবং ত্বকের সমস্যাও হতে পারে। তাই, মডারেশনের মধ্যে থেকে আম উপভোগ করা উচিত।

আম কখন খাওয়া ভালো?

তাসনিম আশিক জানান, আম খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মধ্য সকাল অর্থাৎ সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের মাঝের সময়টা। এটা সবার ক্ষেত্রেই। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ডায়াবেটিস যাদের আছে তারাও চেষ্টা করবেন মধ্য সকালে আম খেতে। এ ছাড়া কেউ যদি বিকেলে খেতে চান বা রাতে খেতে চান সেক্ষেত্রে আম গ্রহণের পরিমাণটা কমিয়ে আনতে হবে। তবে মধ্য সকালটাই সবচেয়ে ভালো।

ডায়াবেটিস রোগীরা কি আম খেতে পারবেন?

তাসনিম আশিক বলেন, আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০ এর বেশি। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কার্বোহাইড্রেটের সূচক। যত কম গ্লাইসেমিক রেটের খাবার খাওয়া হবে ততই শরীরের জন্য ভালো। ডায়াবেটিসের রোগী আম খেতে পারেন না, এ কথা ভুল। তবে ভরপেট খাওয়ার পর দুপুর বা রাতে আম খেলে তার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে।

সেক্ষেত্রে বুদ্ধি করে আম খেতে হবে। যেদিন সকালের নাশতায় আম খাওয়া হচ্ছে, সেদিন দুপুরে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। দেখতে হবে শরীরে জমা অতিরিক্ত ক্যালরি যেন ঝরিয়ে ফেলা যায়।

phone
ডায়াবেটিসে আম

পাকা মিষ্টি আম একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম খেতে পারেন। মানে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা অর্ধেকটা মাঝারি আম খাওয়া যাবে।

আম খেলে কি ওজন বাড়ে?

পরিমিত পরিমাণে আম খেলে ওজন বাড়ে না৷ যারা ওজন কমানোর ডায়েটে আছেন তারা প্রতিদিন ক্যালরি মেপে নির্দিষ্ট পরিমাণ আম খেতে পারেন৷ তবে আম খাওয়ার সময় সেটি কীভাবে খাচ্ছেন তার ওপরও ক্যালরির পরিমাণ নির্ভর করে৷ আপনি যদি কোনো চিনিযুক্ত ডেজার্ট বা আমের জুস খান তাহলে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। ফলে ওজন বাড়তে পারে।

আম খেলে ওজন না বাড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে এতে থাকা খাদ্য আঁশ। আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ আছে, কিন্তু এর ক্যালরি মূল্য অন্যান্য ফলের তুলনায় কিছুটা কম। তাই আমকে স্ন্যাকস হিসেবে রাখলে পেট ভরা থাকবে। এতে অন্যান্য ক্যালরিবহুল খাবার খাওয়া থেকেও দূরে থাকা সম্ভব হবে।

যখন কোনো ব্যক্তি সুষম উপায়ে খাবার খাবেন, তখন তিনি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ২টি আম রাখতে পারেন। এর বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। পাশাপাশি আমে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফেন রয়েছে, যা ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দিনের বেলার ঘুম এমনিতেই আমাদের মেটাবলিক রেট কমিয়ে দেয়, যা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এ ছাড়া আম খেলে ওজন বাড়বে, যদি কেউ প্রক্রিয়া করে খায়। যেমন আমের শরবত, স্মুদি, আমের আইসক্রিম বা চাটনি বানিয়ে খেলে বাড়তি চিনি যুক্ত হবে এবং প্রভাব পড়বে ওজনে।

 

আরবি/শিতি

Link copied!