ডিম আগে না মুরগি আগে- প্রশ্নটি অনেকের মুখে শোনা যায়।
এটি একটি জটিল ধাঁধাও। তবে এই ধাঁধার কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
তবে একদল বিজ্ঞানীর দাবি, এই প্রশ্নের সমাধান করতে তারা সক্ষম হয়েছেন।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়।
তাদের গবেষণায় উঠে আসে, একটা সময় আধিনুক পাখি ও সরীসৃপদের আদি পূর্বপুরুষরা ডিম পাড়ার পরিবর্তে শাবকদের জন্ম দিত।
অর্থাৎ আগে মুরগির জন্মই হয়েছিল। পরে মুরগি ডিম দিতো।
এই আবিষ্কারের বিষয়বস্তু সমস্তই গবেষণা জার্নাল নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত হয়েছে।
নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে ব্রিস্টেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রাচীন বিশ্বাসকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
তাদের দাবি, খোসাযুক্ত ডিমগুলি অ্যামনিওটেসের অর্থাত্ সরীসৃপ প্রাণীদের বেঁচে থাকার সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল।
এই প্রাণীদের ভ্রূণ ডিমের ভিতরে একটি অ্যামনিওন বা ঝিল্লি অথবা বস্তার ভিতর বড় হত।
অর্থাত্ ডিমের আগে পৃথিবীতে এসেছে মুরগি।
গবেষণায় আরও বলা হয়, অনেক বছর আগে মুরগি ডিম পাড়ত না। তারাও মানুষের মতই সন্তান প্রসব করত।
বিবর্তনের ফলেই পাখিরা ডিম পাড়তে শুরু করে। সেই কারণে ডিমের আগেই মুরগী এসেছিল।
গবেষকরা বলেছেন, অ্যামনিওটিক ডিম্বাণু বর্তমান উভচর প্রাণীর অ্যানামনিওটিক ডিম থেকে অনেকটাই আলাদা। এটিতে ডিমের খোসা ও বহিরাগত ঝিল্লির অভাব রয়েছে।
অ্যামনিওটিক ডিমে অ্যামনিয়ন, কোরিওন, অ্যালানটোইসসহ ভ্রূণের ঝিল্লির একটি স্যুট থাকে। সে সঙ্গে এটির বহিরাগত শেলে অনেক খনিজযুক্ত থাকে। অথবা খনিজের পরিমাণ অনেক কম থাকে।
ব্রিস্টেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ সায়েন্সের নেতৃত্ব ওই গবেষণা হয়। ৫১টি প্রজাতির জীবাশ্ম ও ২৯টি জীবন্ত প্রজাতির ডিম নিয়ে গবেষণাটি করা হয়।
গবেষকরা শক্ত বা নরম খোসাযুক্ত ডিম নিয়ে গবেষণাটি করেন। গবেষণায় উঠে আসে, স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ অ্যামনিওটার সমস্ত শাখা তাদের দেহের মধ্যে ভ্রূণকে দীর্ঘসময়ের জন্য ধরে ভ্রূণকে ধরে রাখতে পারে।
যদিও শক্ত খোলসযুক্ত ডিমকে প্রায়ই বিবর্তনের অন্যতম সেরা উদ্ভাবন হিসেবে দেখা হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বর্ধিত ভ্রূণের ধরণ এই প্রাণীদের চূড়ান্ত সুরক্ষা দিয়েছে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল বেন্টন বলেন, ‘আমাদের কাজ ও সম্প্রতি বছরগুলিতে আরও অনেক গবেষণা, পাঠ্যপুস্তকের ক্লাসিক সরীসৃপের ডিম মডেলটি সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে।’
‘প্রথম অ্যামনিওটগুলি বরং বর্ধিত ভ্রূণের ধারনাকে বিকশিত করেছিল। মায়ের অভ্যন্তরে কম বা বেশি সময়ের জন্য বিকাশমান ভ্রূণের থেকে খোসাযুক্ত ডিম অনুকূল পরিবেশ না হওয়ার জন্য জন্ম বিলম্বিত করতে পারে।’
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক বাওউ জিয়াং বলেন, ‘কখনও কখনও ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত প্রজাতিদের আচরণে এটি দেখা যায়। অনুমান করা হয়েছে টিকটিক খুব সহজেই ডিম পাড়তে পারে।’
‘যাইহোক বিজ্ঞানীদের কথায় এই নিয়ে আরও অনেক বেশি গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ধাপেই জটিল ধাঁধার সমাধান হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :