ভাত, রুটির পরে যে খাবারটি আমাদের কাছে বেশি পরিচিত, সেটি হলো আলু। আলু প্রায় সবার বাড়িতেই খাওয়া হয়। অতি সাধারণ দেখতে এই সবজি অসাধারণ সব গুণাবলিতে ভরপুর। এতে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার, জিঙ্ক, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম। এ ছাড়াও আলুতে আরও পাবেন পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি সহ অন্যান্য খাদ্যগুণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে নিয়মিত খেতে হবে এই সবজি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের অনেক সমস্যা দূর করতে কাজ করে আলু। এটি খুব সহজেই হজম করা যায়। যেকোনো বয়সি মানুষ এই খাবার খেতে পারেন। আলু হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। তাই সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে আলু খেতে হবে। আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় পরিমিত আলু রাখা জরুরি। জেনে নিন আলু খাওয়ার উপকারিতা-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আলুতে থাকে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে এই ভিটামিন। তা ছাড়া আলু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ সমৃদ্ধ। এটিও আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই নানা ধরনের রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিয়মিত আলু খাওয়া জরুরি।

পেট ভালো রাখে
আলু হজমে সহায়ক একটি খাবার। এটি পেটের নানা ধরনের সমস্যা কমাতেও কাজ করে। আলু খেলে রক্ষা পাওয়া যায় অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যা থেকে। আলুতে থাকে ভিটামিন বি ৩। এই ভিটামিন আমাদের গ্যাসের সমস্যা দূর করতে কাজ করে। তাই পেট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত আলু খেতে হবে। তবে আলু দিয়ে তৈরি ভাজাভুজি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
আলু খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে এই ভয় থেকে অনেকে আলু খাওয়া বাদ দেন। কিন্তু এটি ঠিক নয়। আলু খেলে ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকে না। এই সবজিতে থাকে ফাইবার। ফলে আলু খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে না এবং অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার ভয় থাকে না। যে কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
হাড় ভালো রাখে
একটু বয়স বাড়লেই হাড়ের নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এদিকে হাড় ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত থাকে আলুতে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত আলু খেতে হবে।

অপকারিতা
১. প্রতিদিন বেশি পরিমাণে আলু খেলে শরীরের রক্তের শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আলু খাওয়া কমিয়ে দিন।
২. কুচকে যাওয়া আলুর মধ্যে আছে সোলানিন নামক একটি বিষাক্ত যৌগ। যা রক্তের সঞ্চালনে এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা, মাথাব্যথা, এমনকি ডায়রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। তাই কুচকে যাওয়া বা বিবর্ণ আলু থেকে দূরে থাকুন।
৩. প্রত্যেক দিন আলু খেলে বেড়ে যেতে পারে শরীরের ওজন। তাই স্থুল ব্যক্তিরা আলু এড়িয়ে চলুন।
৪. আলু উচ্চ তাপমাত্রায় রাঁধলে অ্যাক্রিলামাইড নামক বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান নির্গত করে। এ পদার্থের উচ্চ উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্র প্রভাবিত করে ও ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. আলু ভাজলে যে তেল লাগে, তাতে ক্যালরি বাড়ে।
৬. আলু প্রক্রিয়াজাত করার কারণে তা উচ্চ চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালরি ধারণ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক; বিশেষ করে ফেঞ্চ ফ্রাইস ও চিপসের মতো খাবারগুলো।
৭. আলু মাখন, মার্জারিন বা অন্য চর্বিযুক্ত উপাদান দিয়ে রান্না করলে উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ওজন বাড়াবে।

৮. আলু খোসা ছাড়া সেদ্ধ করলে কিছু ভিটামিন ও খনিজের পুষ্টি হারাতে পারে। এ জন্য খোসাসহ রাঁধলে ভালো। এ ছাড়া আলুর ত্বকের ঠিক নিচে একটি পাতলা স্তরে সব পুষ্টি রয়েছে। এ জন্য সেদ্ধ আলুর সাবধানে খোসা ছাড়াতে হবে।
৯. একটি সেদ্ধ আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭৮। তাই আলু খেলে সুগার বাড়তে পারে। শুধু আলু না খেয়ে আলুর সঙ্গে সবজি যোগ করে খান। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা স্থিতিশীল থাকবে।
১০. আলুতে দুই ধরনের গ্লাইকোলকায়েড নামক প্রাকৃতিক টক্সিন, যেমন সোলাইন ও চকোনাইন থাকে। যদি আলুর কয়েক জায়গায় সবুজ চিহ্ন পাওয়া যায়, তাহলে না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে থাকা টক্সিন রান্না করলেও দূর হয় না।