প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্যে মসলা হিসেবে গোলমরিচ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লতাজাতীয় এ উদ্ভিদের ফল শুকিয়ে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ফলে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও ক্যালসিয়াম। গোলমরিচ শুধু তরকারির স্বাদই বাড়ায় না, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিষেধকের ভূমিকাও রাখে।
গোলমরিচ এমন এক সুগন্ধি মসলা যা প্রায় সব ধরণের রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এটি শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং উপকারিতার জন্যও বিখ্যাত। নিচে গোলমরিচের কিছু সাধারণ ব্যবহার দেওয়া হলো:
রান্নায় ব্যবহার:
মাংস ও মাছ রান্নায় – গোলমরিচ মাংসের গন্ধ দূর করে এবং স্বাদ বাড়ায়।
সুপ, সস ও স্ট্যুতে – স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।
সবজি ও ডাল রান্নায় – হালকা গুঁড়া করে ছিটিয়ে দিলে খাবারে একটা ঝাল-মসলাযুক্ত ফ্লেভার আসে।
সালাদ ও ড্রেসিংয়ে – কাঁচা গোলমরিচ গুঁড়ো মেশালে স্বাদ বাড়ে।
ডিম ও নাস্তার আইটেমে – হালকা গোলমরিচ ছিটিয়ে খেতে বেশ মজা লাগে।
গোলমরিচের উপকারিতা:
হজমে সহায়তা করে- গোলমরিচ হজমশক্তি বাড়ায় ও পাকস্থলীতে পাচক রস উৎপাদন বাড়ায়। এতে গ্যাস, বদহজম ও পেট ফাঁপা কমে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে সহায়তা করে- গোলমরিচ শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে ক্যালরি পোড়াতে সহজ হয়।
ঠান্ডা ও কাশিতে উপকারী- এটি কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ও ঠান্ডা-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। আদা বা মধুর সাথে খেলে আরও ভালো কাজ করে।
ত্বকের যত্নে সহায়ক- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি ব্রণ বা ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়- গোলমরিচে থাকা পাইপারিন নামক উপাদান স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- নিয়মিত সামান্য পরিমাণে গোলমরিচ খেলে এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
গোলমরিচের যেমন উপকারিতা আছে ঠিক তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
গোলমরিচের অপকারিতা:
অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা- বেশি পরিমাণে খেলে পেটে জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি হতে পারে।
অ্যালার্জির সমস্যা- কারো কারো শরীরে গোলমরিচ অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। যেমন: ত্বকে চুলকানি, র্যাশ, বা শ্বাসকষ্ট।
গর্ভবতী নারীদের জন্য সতর্কতা- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গোলমরিচ খেলে পেটে জ্বালাপোড়া বা হরমোনে প্রভাব পড়তে পারে, তাই এই সময়ে সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
মুখ ও গলার জ্বালা- কাঁচা বা অতিরিক্ত গোলমরিচ খেলে মুখে বা গলায় জ্বালাভাব, খুসখুসে কাশি বা শুকনো ভাব হতে পারে।
রক্ত পাতলা করার ওষুধের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া- যারা ব্লাড থিনার (যেমন ওয়ারফারিন) নিচ্ছেন, তাদের জন্য বেশি গোলমরিচ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি রক্ত প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে।
ঘুমে সমস্যা- বেশি খেলে এটি কিছু মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, কারণ পাইপারিন মস্তিষ্কের উপর সামান্য উত্তেজক প্রভাব ফেলে।