ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

অ্যাসপিরিনের উপকারিতা ও অপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
অ্যাসপিরিন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে এক অতি পরিচিত ওষুধের নাম অ্যাসপিরিন। এটি এমন একটি ওষুধ যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা, জ্বর এবং প্রদাহ উপশমে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধু সাধারণ ব্যথার ওষুধ হিসেবে নয়, অ্যাসপিরিন হৃদরোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

অ্যাসপিরিন একটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ যা মূলত ব্যথা, জ্বর এবং প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। সাধারণভাবে অ্যাসপিরিন খাওয়া হয় মাথাব্যথা, পেশীর ব্যথা, জ্বর, দাঁতের ব্যথা এবং বাতজাতীয় ব্যথা কমাতে।

অনেক সময় এ ওষুধ ভুলভাবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করলে তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আজ আমরা অ্যাসপিরিনের কার্যকারিতা, বিভিন্ন রোগে এর ব্যবহার, এবং এর উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে একজন সচেতন পাঠক এ ওষুধ ব্যবহারের আগে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করাই ভাল না। তাই যেকোন ওষুধ গ্রহণের আগেই নিজের সমস্যার কথা জানাতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।

অ্যাসপিরিনের কাজ কী?

অ্যাসপিরিন শরীরের প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক একটি রাসায়নিক উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ব্যথা, জ্বর এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, এটি রক্ত পাতলা করার কাজ করে, অর্থাৎ এটি প্লেটলেট জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। এই কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধেও এটি ব্যবহৃত হয়।

কোন রোগের চিকিৎসায় অ্যাসপিরিন ব্যবহৃত হয়?

অ্যাসপিরিন ব্যবহৃত হয় নিচের রোগ বা অবস্থার চিকিৎসায়
# সাধারণ ব্যথা এবং জ্বর
# বাত বা আর্থরাইটিস
# হৃদরোগ প্রতিরোধ (হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে)
# স্ট্রোক প্রতিরোধ
# কিছু ক্ষেত্রে করোনারি আর্টারি ডিজিজ

 

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যাসপিরিন খাওয়া যাবে কি?

না, অ্যাসপিরিন খুব সাধারণ মনে হলেও এটি অনেক জটিল প্রভাব ফেলতে পারে শরীরে। রক্ত পাতলা করার ক্ষমতার কারণে এটি হঠাৎ রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। যারা আলসার, অ্যাজমা, কিডনির সমস্যা বা রক্তপাতের সমস্যা নিয়ে ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন মারাত্মক হতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যাসপিরিন গ্রহণ করা উচিত।

অ্যাসপিরিন নাকি প্যারাসিটামল-কোনটি বেশি কার্যকর? 

এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনি কোন সমস্যার জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তার ওপর।  
# ব্যথা ও জ্বরের জন্য: প্যারাসিটামল সাধারণত নিরাপদ ও কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত।  
# প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন: অ্যাসপিরিন বেশি কার্যকর।  
# হৃদরোগ প্রতিরোধ: অ্যাসপিরিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যেখানে প্যারাসিটামলের তেমন ভূমিকা নেই।  

তবে যেহেতু অ্যাসপিরিনের রক্ত পাতলা করার গুণ আছে, এটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই রোগভেদে সঠিক ওষুধ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাসপিরিনের উপকারিতা

# ব্যথা ও জ্বর কমাতে সাহায্য করে  
# প্রদাহ নিরাময়ে কার্যকর  
# হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক  
# কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গবেষণায় সম্ভাবনা দেখা গেছে

অ্যাসপিরিনের অপকারিতা

# পাকস্থলীতে আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে  
# অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়  
# শিশুদের ক্ষেত্রে রেইয়ের সিন্ড্রোম নামক বিরল কিন্তু মারাত্মক অসুস্থতা হতে পারে  
# অ্যাজমা রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে  

অ্যাসপিরিন একটি কার্যকর ওষুধ হলেও এটি ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত বা দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্রহণ বিপদজনক হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কোনো ওষুধ খাচ্ছেন বা আগে থেকে কোনো রোগে আক্রান্ত থাকেন, তাহলে অ্যাসপিরিন নেয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।