রক্তের প্রধান উপাদান হলো আয়রন। আয়রন আমাদের রক্তের রোগজীবাণু দূর করতে সাহায্য করে, বাড়িয়ে তোলে রোগ প্রতিরোধশক্তি। মস্তিষ্ককে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য আয়রনের ভূমিকা অপরিহার্য। আয়রন বাড়ায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। রক্তে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধিতে গরুর কলিজা অন্যতম। তবে দীর্ঘদিন ফ্রিজে সংরক্ষণের পরিবর্তে কলিজা টাটকা খাওয়াই উত্তম।
গরুর কলিজার কাজগুলো
রক্ত পরিষ্কারক: কলিজা রক্ত থেকে বিষাক্ত উপাদান , ওষুধের অবশিষ্টাংশ, এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে বের করে দেয়।
পাচন প্রক্রিয়ায় সহায়তা: কলিজা পিত্তরস তৈরি করে, যা চর্বি হজমে সাহায্য করে। পিত্তরস গলব্লাডারে জমা হয় এবং হজমের সময় ছোট অন্ত্রে এসে কাজ করে।
শক্তি সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ: যখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে, তখন কলিজা তা গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা রাখে। শরীরে যখন শক্তির ঘাটতি হয়, তখন এই গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করে শক্তি দেয়।
প্রোটিন উৎপাদন: কলিজা রক্তে থাকা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে, যেমন: অ্যালবুমিন (রক্তে তরল বজায় রাখে), ক্লটিং ফ্যাক্টরস (রক্ত জমাট বাঁধাতে সাহায্য করে)।
ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সংরক্ষণ: গরুর কলিজা ভিটামিন A, D, B12, আয়রন, তামা (Copper) ইত্যাদি সংরক্ষণ করে এবং শরীরকে প্রয়োজনে সরবরাহ করে।
গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা
আয়রনের দারুণ উৎস– রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গরুর কলিজায় থাকে প্রচুর হিম আয়রন, যেটা শরীর সহজে শোষণ করতে পারে। যাদের রক্তস্বল্পতা আছে, বিশেষ করে আয়রনের ঘাটতি আছে, তাদের জন্য কলিজা খুব উপকারী।
ভিটামিন বি১২ এর ভান্ডার– স্নায়ু ও রক্তের জন্য উপকারী- গরুর কলিজা হলো ভিটামিন B12 এর অন্যতম সেরা উৎস। এই ভিটামিন স্নায়ু ঠিক রাখতে, রক্ত তৈরিতে এবং ক্লান্তিভাব দূর করতে কাজ করে।
ভিটামিন এ– চোখ, ত্বক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- গরুর কলিজায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ভিটামিন A (রেটিনল) থাকে। এটা চোখ ভালো রাখতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
উচ্চ মানের প্রোটিন– পেশি গঠনে সহায়ক- গরুর কলিজায় উচ্চ গুণমানের প্রোটিন থাকে যা দেহের কোষ, পেশি, হরমোন এবং এনজাইম তৈরিতে সাহায্য করে।
ফসফরাস, জিংক, তামা ও সেলেনিয়াম– হাড়, ত্বক ও হরমোনের জন্য দরকারি। এই খনিজ উপাদানগুলো শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যেমন: হাড় মজবুত করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করা।
গরুর কলিজা খুবই পুষ্টিকর হলেও অতিরিক্ত বা অনিয়মিতভাবে খেলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে।
গরুর কলিজার অপকারিতা
অতিরিক্ত ভিটামিন এ : গরুর কলিজায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A (রেটিনল) থাকে। গরুর কলিজা অতিরিক্ত খেলে মাথাব্যথা, বমি, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, লিভারের ক্ষতি, গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্মগত সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে।
কোলেস্টেরল বেশি থাকতে পারে: গরুর কলিজায় উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকে। যারা আগে থেকেই হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
পিউরিনের কারণে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে: কলিজায় পিউরিন থাকে, যা শরীরে গিয়ে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। এতে করে গেঁটেবাত (gout) বা জোড়ার ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকতে পারে: কলিজা হলো দেহের ডিটক্স অঙ্গ, তাই যদি গরুটি সুস্থ না হয় বা অনেক ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কলিজায় কিছু বিষাক্ত পদার্থ বা ভারী ধাতু জমে থাকতে পারে।
খারাপ রান্না বা অর্ধেক রান্না করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি: যদি কলিজা ঠিকমতো রান্না না করা হয়, তাহলে বাকটেরিয়া বা পরজীবী থেকে ইনফেকশন হতে পারে।
অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে: গরুর কলিজা অতিরিক্ত খেলে বমি বমি ভাব, হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা, ত্বকে শুষ্কতা বা চুলকানি, হাড়ে ব্যথার মতো দেখা দিতে পারে।