খেজুর ফলটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত। খেজুরে আছে প্রচুর শক্তি, এমিনো এসিড, শর্করা ভিটামিন ও মিনারেল। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং বি, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন ও অ্যানার্জি। এসব খাদ্য উপাদান শরীরে অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।
তবে পুষ্টিবিদের মতে, খেজুর আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। খুব বেশি খেজুর খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
জেনে নিন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা-
স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকায় এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি রাখে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রী যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভালো থাকে। তাই বেশি বয়সে স্মৃতিশক্তি লোপ করতে না চাইলে বয়স ৩০ হলেই খেজুর খেতে শুরু করে দিন।
কর্মশক্তি বাড়ায়
প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধির কারণে ঝিমুনি ভাব দেখা দিলে প্রতিদিন ৩টি খেজুর খান। তাহলেই আর ক্লান্তি আপনাকে ঘিরে ধরতে পারবে না।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি
যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে। এ ছাড়া নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে বৃদ্ধি পায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও।
দৃষ্টিশক্তি প্রখর
খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। যেমন: বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫। এ ছাড়া ভিটামিন এ১ এবং সিসহ নানা ভিটামিনের পাওয়ার হাইস বলতে পারেন খেজুরকে। এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস
খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হৃদ্রোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর শরীরের খারাপ ধরনের কোলেস্টেরল কমায় (এলডিএল) এবং ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

হিমোগ্লোবিনের সামঞ্জস্যতা বজায়
খেজুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এই আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দিলে বা হিমোগ্লোবিনের কমতি হলে খেজুর খাওয়া শুরু করুন। এর ফলে শরীরের আয়রনের মাত্রা বজায় থাকবে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হবে এবং রক্তের কোষ উৎপন্ন হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে খেজুর। একই সঙ্গে খেজুরের মিষ্টতা চিনির বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
হাড়ের সুরক্ষায়
ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে। সেই সঙ্গে মাড়ির স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত রাখে।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় নানান ধরনের রোগ নিরাময় করার ক্ষমতা রয়েছে এই ফলটির। পাশাপাশি এর পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায়। তাই বয়স ৩০ হলে অবশ্যই প্রতিদিন তিনটি করে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন।
অন্যদিকে, পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেজুর খেলে হতে পারে নানা সমস্যা। অতিরিক্ত খেজুর খেলে পেটের সমস্যা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও ওজন বেড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হতে পারে।
জেনে নিন অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার অপকারিতা-
পেটের সমস্যা
অনেকেই নিয়ম করে ড্রাই ফ্রুটস খান। আর ড্রাই ফ্রুটস হিসেবে খেজুর খুবই জনপ্রিয়। ড্রাই ফ্রুটসে যে খেজুর থাকে, তাতে সালফাইট দিয়ে জারিয়ে রাখা হয়। সালফাইট শরীরে গেলে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেজুর খেলে গ্যাসট্রিকের সমস্যা ছাড়াও, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে অতিরিক্ত ফাইবার হিতে বিপরীত হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা
খেজুর সংরক্ষণে সালফাইট নামক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই সালফাইট শরীরের ভিতরে এবং বাইরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর প্রভাবে ত্বকে র্যাশ, চুলাকানি, লাল হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
ওজন বেড়ে যেতে পারে
ওজন কমানোর ডায়েটে অনেকেই খেজুর রাখেন। কিন্তু মনে রাখবেন একটি খেজুরে ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় ২.৮ গ্রাম। তাই অতিরিক্ত খেজুর ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা
পুষ্টিবিদরা বলছেন, খেজুর খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে খেজুর খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা। খেজুর খেলে দেখা দিতে পারে এলার্জিও। তাই যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের খেজুর না খাওয়াই ভালো।
তাই চিকিৎসকরা প্রতিদিন খেজুর না খেয়ে একদিন পর পর পরিমিত মাত্রায় খেজুর খেতে পরামর্শ দেন।

ভালোমানের খেজুর চেনার উপায়-
১/ সতেজ ও তাজা খেজুরের চামড়া সাধারণত একটু কুঁচকানো হবে। তবে শক্ত হবে না। আবার উপরের চামড়াও বেশি নরম হবে না। উপরের চামড়া হবে চকচকে ও উজ্জ্বল।
আবার খেজুরের গায়ে কোনোভাবেই স্ফটিকযুক্ত চিনি বা দানাদার কিছুর উপস্থিতি থাকবে না। যদি খেজুরের বাইরে তেল বা পাউডারজাতীয় কিছুর উপস্থিতি দেখেন তাহলে বুঝবেন সেটি ভেজাল, মানহীন কিংবা নিম্নমানের খেজুর।
২/ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুরের উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে সব খেজুরের মান ভালো নয়। খেজুর উৎপাদনের দিক থেকে মিশর বিশ্বে প্রথম। এরপর ইরান ও সৌদি আরবের অবস্থান তৃতীয়। চতুর্থ অবস্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এরপর উৎপাদনের শীর্ষে আছে পাকিস্তান, আলজেরিয়ায় ও আফগানিস্তান। তাই খেজুর কেনার আগে কোন দেশেরটা কিনছেন তা জেনে নিন।
৩/ বিভিন্ন ধরনের খেজুরের মধ্যে আজওয়া, আনবারা, সাগি বা সুগায়ি, সাফাওয়ি, মুসকানি, মরিয়ম খেজুর অন্যতম। আরও আছে খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি। এদেশে আজওয়া ও মরিয়ম খেজুরের চাহিদা বেশি।
৪/ ভালো কিংবা খারাপ বা নিম্নমানের খেজুর কি না তা যাচাই করার আরও এক উপায় হলো খেজুরে উপস্থিত মিষ্টির মাত্রা খেয়ে দেখা। খেজুরের প্রাকৃতিকভাবে থাকা মিষ্টি হবে সহনীয় পর্যায়ের।
যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না তারাও খেতে পারে এমন মিষ্টি থাকে উন্নতমানের খেজুরে। মনে খেজুর খাওয়ার সময় যদি অতিরিক্ত মিষ্টি লাগে তাহলে বুঝতে হবে সেখানে কৃত্রিম কিছু দেওয়া হয়েছে।
৫/ ভালো খেজুর চেনার আরও এক কৌশল হলো পিঁপড়া ও মাছির উপস্থিতি লক্ষ্য করা। যদি দেখেন খেজুরের সামনে মাছি ও পিঁপড়া ভিড় করছে, তার মানে সেটি ভালো খেজুর না।
আপনার মতামত লিখুন :