জাম খেতে পছন্দ করে না, এমন মানুষ কমই আছে। উপকারী এই ফল আমাদের শরীরের জন্য নানাভাবে কাজ করে। তবে জাম খাওয়ার পর এর বীজ ফেলে দেন সবাই। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই জামের বীজ আমাদের জন্য কতটা উপকারী? জানলে এরপর থেকে আর বীজ ফেলে দেবেন না।
জাম বীজ খাওয়ার উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক- জাম বীজে জাম্বোলিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইনসুলিন নিঃসরণকে সক্রিয় করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
হজমে সহায়তা করে- জাম বীজ চূর্ণ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, অম্বল এবং পেটের গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে। বদহজম কমায় এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়।
ওজন কমাতে সহায়ক- এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে, যা চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে।
ত্বকের জন্য ভালো- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি ব্রণ, চর্মরোগ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে- এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিষ্কার করে- জাম বীজ চূর্ণ রক্তে টক্সিন কমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত বিশুদ্ধ রাখে।
ডায়রিয়া ও পাইলসে উপকারী- জাম বীজের ট্যানিন উপাদান পেটের সমস্যা যেমন ডায়রিয়া ও পাইলসের উপশমে সহায়ক।
জাম বীজের অনেক ওষধি গুণ রয়েছে। তাই নিয়ম মতো খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
জামের বীজ প্রস্তুত খাওয়ার নিয়ম
বিচি সংগ্রহ ও শুকানো
পাকা জাম খেয়ে বিচিগুলো আলাদা করে নিয়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। রোদে ভালোভাবে ৪-৫ দিন ধরে শুকাতে হবে, যতক্ষণ না পুরোপুরি শুকিয়ে যায়।
গুঁড়ো তৈরি করা
শুকনো বিচিগুলো মিক্সারে ব্লেন্ড করে গুঁড়ো করতে হবে। চাইলে ছেঁকে নেয়া যেতে পারে যাতে মসৃণ হয়।
সংরক্ষণ
বায়ুরোধী কাঁচ বা স্টিলের কৌটায় রাখা উত্তম। ঠাণ্ডা ও শুকনো জায়গায় রাখলে ২-৩ মাস ভালো থাকে।
যেমন জামের বীজের অনেক ওষধিগুণ আছে,তেমনি কিছু অপকারিতাও আছে, যদি ভুলভাবে বা অতিরিক্ত খাওয়া হয়।
জামের বিচির অপকারিতা
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া- যেহেতু জাম বীজ রক্তে গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে, অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি কেউ ডায়াবেটিসের ওষুধও খাচ্ছে। উপসর্গ: মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, ঘাম, অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা।
পেটে সমস্যা- কিছু মানুষ জাম বীজ খেলে গ্যাস, অম্বল বা ডায়রিয়া অনুভব করতে পারেন, বিশেষ করে প্রথমবার খাওয়ার সময় বা খালি পেটে।
অ্যালার্জি বা এলার্জিক প্রতিক্রিয়া- কারো কারো শরীরে জাম বীজে থাকা কিছু উপাদানের কারণে চুলকানি, র্যাশ, বা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের জন্য ঝুঁকি- এখনো পর্যাপ্ত গবেষণা নেই এই গ্রুপের জন্য, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক না।
অতিরিক্ত খেলে কিডনিতে চাপ পড়তে পারে- গুঁড়ার মধ্যে থাকা কিছু খনিজ উপাদান অতিরিক্ত খেলে কিডনির উপর চাপ ফেলতে পারে।