ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

আধা সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা-অপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
আধা সেদ্ধ ডিম। ছবি: সংগৃহীত

ডিম- ছোট্ট এই খাদ্য উপাদানটি যেমন সহজলভ্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। “প্রোটিনের পাওয়ার হাউস” নামে পরিচিত এই খাবারটি বহু রকমে রান্না করা যায়: সেদ্ধ, পোচ, ভাজি, অমলেট, স্ক্র্যাম্বল ইত্যাদি। 

তবে যারা স্বাস্থ্যসচেতন, তাদের মধ্যে আধা সেদ্ধ ডিমের কদর বোধয় একটু বেশিই। কারণ এতে স্বাদ ও পুষ্টির এক দারুণ মিশেল থাকে।  

আমাদের আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানব, আধা সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা, এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলো, এবং কিছু মজার তথ্য যা হয়তো আপনি জানতেন না!

আধা সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা

প্রোটিনের দুর্দান্ত উৎস

অর্ধেক সেদ্ধ ডিমে প্রাকৃতিক প্রোটিন অক্ষুণ্ণ থাকে, কারণ এটি অতিরিক্ত গরমে ধ্বংস হয় না। এটি শরীরের কোষ গঠন, টিস্যু পুনর্নির্মাণ এবং পেশির গঠনে সহায়তা করে। একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ৬-৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

সহজ হজমযোগ্য

ডিম বেশি সেদ্ধ হলে তা হজমে কিছুটা সময় লাগে, বিশেষ করে কুসুম শক্ত হয়ে গেলে। অর্ধেক সেদ্ধ ডিম তুলনামূলকভাবে নরম, যা আমাদের পাচনতন্ত্র সহজে ভেঙে ফেলতে পারে।

চুল, ত্বক ও চোখের জন্য ভালো

ডিমে থাকা ভিটামিন এ,ডি,ই এবং বিয়োগ্রেডযোগ্য ফ্যাট ত্বকের কোমলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া, এতে থাকা লুটেইন ও জ্যাক্সান্থিন চোখের রেটিনার জন্য উপকারী।

ব্রেন ফাংশন বাড়ায়

ডিমের কুসুমে থাকা কলাইন নামক উপাদান নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাসিটাইলকোলিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা স্মৃতি, শেখার ক্ষমতা ও মনঃসংযোগে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে শিশু ও ছাত্রদের জন্য এটি উপকারী।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

ডিম দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। অর্ধেক সেদ্ধ ডিমে কার্বোহাইড্রেট কম থাকে, ফলে এটি কিটো বা লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণকারীদের জন্য উপযুক্ত।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সরবরাহ করে

ডিমের কুসুমে থাকা এইচডিএল (শরীরের জন্য উপকারী কলেস্টরাল) হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।

আধা সেদ্ধ ডিমের অপকারিতা

সালমোনেলা সংক্রমণের সম্ভাবনা

যদি ডিমের মধ্যে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে এবং সেটি ভালোভাবে রান্না না হয়, তবে তা খাদ্যজনিত বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকিপূর্ণ।

কাঁচা কুসুম হজমে সমস্যা করতে পারে

অর্ধেক সেদ্ধ ডিমের কুসুম পুরোপুরি রান্না না হওয়ায় কিছু মানুষের হজমে সমস্যা হতে পারে। এতে অস্বস্তি, গ্যাস বা পেট ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।

অ্যালার্জির ঝুঁকি

অনেক শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা ডিমের প্রতি অ্যালার্জিক হতে পারেন। কাঁচা বা আধা-কাঁচা ডিমে এই প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হতে পারে।

পুষ্টি শোষণের সমস্যা

ডিমে থাকা এভিডিন নামক একটি প্রোটিন কিছু ক্ষেত্রে বায়োটিনের (ভিটামিন বি৭) শোষণ বাধাগ্রস্ত করতে পারে যদি ডিমটি পুরোপুরি না রান্না করা হয়। তবে এটা খুবই কম মাত্রায় হয় এবং নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে বড় সমস্যা হয় না।

মজার তথ্য

পারফেক্ট অর্ধেক সেদ্ধ ডিম রান্নার নিয়ম:
- একটি ডিম সেদ্ধ করতে ৪-৬ মিনিট (Medium Boil) যথেষ্ট। ৪ মিনিট রাখলে কুসুম থাকবে তরল; ৬ মিনিটে সেটি থাকবে জেলির মতো নরম।
- ডিম সেদ্ধ করার পর সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে খোসা সহজে ছাড়ানো যায়।

জাপানি অনসেন তামাগো:  
- জাপানে অর্ধেক সেদ্ধ ডিম একটি জনপ্রিয় খাবার, যাকে বলা হয় অনসেন তামাগো, যা গরম ঝর্ণার পানিতে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। এতে ডিমের কুসুম নরম ও ক্রিমি হয়, এবং সাধারণত সয়া সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অর্ধেক সেদ্ধ ডিম:
- ফিলিপাইনে অর্ধেক সেদ্ধ ডিমের মধ্যে বিকশিত ভ্রূণযুক্ত বালুত খাওয়া হয়, যেটা স্থানীয় সুস্বাদু খাবার।
- দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেক রামেন রেসিপিতে অর্ধেক সেদ্ধ ডিম একটি আবশ্যিক উপাদান।

একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান:
- প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডিম উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে বেশ বড় একটি অংশ আধা সেদ্ধ বা নরম সেদ্ধ অবস্থায় খাওয়া হয়।

অর্ধেক সেদ্ধ ডিম একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং সহজে প্রস্তুত খাবার। এটি খেলে যেমন শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ফ্যাট ও ভিটামিন পাওয়া যায়, তেমনি হজমে সুবিধা হয় এবং মনোযোগও বাড়ে। তবে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রান্না করা উচিত এবং ডিমের গুণগত মান যাচাই করা জরুরি।

এটি এমন একটি খাবার যা একদিকে যেমন পুষ্টি সরবরাহ করে, তেমনি খেতে মজারও বটে। আপনি যদি ডিমপ্রেমী হন, তবে অর্ধেক সেদ্ধ ডিম হতে পারে আপনার পরবর্তী প্রিয় স্ন্যাক!