ভাত আমাদের খাদ্যসংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভাত ছাড়া আমাদের খাবার যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়, তাই না? বিশেষ করে বাংলাদেশে, প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ভাত না থাকলে যেন খাবারই পূর্ণতা পায় না আমাদের।
কিন্তু সব চাল একরকম নয়। কেউ পছন্দ করে সিদ্ধ চালের ভাত খেতে আবার কারও পছন্দ আতপ চালের ভাত। আতপ চালের ভাত একটু হালকা, ঝরঝরে আর খেতে বেশ মজার হয়ে থাকে। তবে এর স্বাদের পেছনে লুকিয়ে আছে কিছু স্বাস্থ্যগত দিকও।
ভালো যেমন আছে, তেমনি কিছু সাবধানতার কথাও। আজ চলুন, একটু খোলামেলা ভাবে জেনে নিই আতপ চালের ভাতের উপকারিতা আর অপকারিতার গল্প ও এর পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এর স্বাস্থ্যগত দিকও।
আতপ চাল কী?
আতপ চাল হলো এমন এক ধরণের চাল যা ধান থেকে খোসা ছাড়ানোর পর শুকনো অবস্থায় সরাসরি চাল হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়, কিন্তু সেটিকে আগেই সিদ্ধ করা হয় না (যেটা সিদ্ধ চালের ক্ষেত্রে করা হয়)। তাই আতপ চাল কিছুটা হালকা ও চকচকে হয় এবং রান্নার সময় কম লাগে।

আতপ চালের ভাতের উপকারিতা
হজম করতে সহজ
আতপ চালের ভাত তুলনামূলকভাবে নরম ও হালকা হয়, যা সহজে হজম হয়ে যায়। শিশু, বৃদ্ধ বা দুর্বল পাচনতন্ত্রের মানুষের জন্য এটি বেশ সহায়ক।
তুলনামূলক কম শর্করা, কম ক্যালোরি
যদিও চাল সাধারণত কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ, আতপ চালের ভাতে পানি বেশি মিশে থাকে এবং রান্নার সময় কিছু শর্করা নষ্ট হয়। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য এটি তুলনামূলকভাবে ভালো পছন্দ হতে পারে।
সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য
আতপ চাল গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই এটি সিদ্ধ চালের চেয়ে সস্তা ও সহজলভ্য।
সতেজতা ও স্বাদে ভিন্নতা
অনেকেই মনে করেন আতপ চালের ভাতে একটা কাচা স্বাদ থাকে যা ভিন্ন রকমের তৃপ্তি দেয়, বিশেষ করে শীতের দিনে তরকারি বা ভর্তার সাথে খাওয়ার সময়।
আতপ চালের ভাতের অপকারিতা
কম পুষ্টিগুণ
সিদ্ধ চালের তুলনায় আতপ চালে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ কিছুটা কম থাকে। কারণ সিদ্ধ চাল প্রক্রিয়াকরণের সময় অনেক পুষ্টি উপাদান চালের মধ্যে ঢুকে পড়ে, যা আতপ চালে হয় না।
রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ায়
যেহেতু আতপ চাল কম ফাইবারযুক্ত, তাই এটি রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি চিন্তার বিষয়।
কখনও কখনও অতিরিক্ত পালিশ করা হয়
অনেক সময় বাজারে আতপ চাল অতিরিক্ত পালিশ করা অবস্থায় পাওয়া যায়, যাতে চকচকে লাগে। এতে পুষ্টিগুণ আরও কমে যায় এবং কেবল "সাদা স্টার্চ" রয়ে যায়।
তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগে
আতপ চালের ভাত তুলনামূলকভাবে দ্রুত হজম হয়ে যায়, ফলে খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আবার ক্ষুধা লাগতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী তৃপ্তি পেতে অনেকে সিদ্ধ চালকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

কীভাবে আতপ চালের ভাত স্বাস্থ্যকর করা যায়?
সবজি ও প্রোটিনের সঙ্গে খান: আতপ চালের ভাতের সঙ্গে শাকসবজি, ডাল, মাছ বা ডিম খেলে পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা হয়।
ফাইবারযুক্ত খাবার যুক্ত করুন: যেহেতু আতপ চালের ফাইবার কম, তাই সালাদ বা ছোলাবুট জাতীয় কিছু যোগ করতে পারেন।
পরিমিত পরিমাণে খান: বেশি না খেয়ে পরিমিত আতপ চাল খেলে শরীর ঠিক থাকে।
আতপ চালের ভাত আমাদের খাদ্যতালিকার এক প্রাচীন ও প্রিয় অংশ। এর কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা থাকলেও সচেতনভাবে বেছে না নিলে কিছু ক্ষতিও হতে পারে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যতালিকার মাধ্যমে আতপ চালের ভাতকেও স্বাস্থ্যকর ও উপকারী করে তোলা সম্ভব।