সবুজ, টকটকে, গোলগাল একটা ফল- যার নাম শুনলেই জিভে জল আসে। হ্যাঁ, বলছি আমাদের চিরচেনা আমলকির কথা!
ছোট এই ফলটা শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও দারুণ শক্তিশালী। তবে যা খুশি তাই খাও বলার মতো ব্যাপার নয়, কারণ প্রতিটি খাবারেরই যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি কিছু অপকারিতাও থাকে। তাই আজ আমলকি নিয়ে একটু গভীরভাবে আলাপ করি চলুন। কেন খাব, কখন খাব, আর কাদের জন্য সাবধানতা দরকার চলুন জেনে নেই সব।
আমলকি: প্রকৃতির এক অনন্য উপহার
আমলকি বা আমলা দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনপ্রিয় ভেষজ ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও আরও নানা দরকারি উপাদান। আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা পর্যন্ত- সবার কাছেই আমলকির আলাদা কদর আছে।
আমলকির উপকারিতা
ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে করে আরও শক্তিশালী। ঠান্ডা-কাশি থেকে শুরু করে ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিরোধে এটি কার্যকর।
চুল ও ত্বকের যত্নে অব্যর্থ
অনেকে আমলকি খায় শুধু সুন্দর চুলের আশায়- কারণ এটি চুল পড়া কমায়, খুশকি দূর করে এবং চুলের আগা ফাটা রোধে সহায়তা করে। ত্বকেও এনে দেয় প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।
হজমে সহায়ক
আমলকির টক-ঝাল স্বাদ হজমে সাহায্য করে। এটি পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি কমায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে
গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে নিয়মিত খাওয়া হলে।
হার্ট ও লিভারের বন্ধু
আমলকি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং লিভার পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে, ফলে হার্ট ভালো থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বোম্ব!
অ্যাজিং, ক্যানসার প্রতিরোধ, চোখের যত্ন- সব ক্ষেত্রেই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো দারুণ কাজ করে।
আমলকির অপকারিতা: অতিরিক্ত হলেই বিপদ
যদিও আমলকি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর, তবুও অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খেলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে:
অতিরিক্ত টকজাত খাবার হজমে সমস্যা করতে পারে
যাদের গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের সমস্যা আছে, তারা অতিরিক্ত কাঁচা আমলকি খেলে উল্টো অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।
রক্তে কমে যেতে পারে গ্লুকোজ
ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি যদি নিয়মিত আমলকি খান, তবে রক্তে গ্লুকোজ খুব কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা
অতিরিক্ত আমলকি ফাইবার সরবরাহ করে, যা কারো কারো জন্য ডায়রিয়া বা পেট গরমের কারণ হতে পারে।
ওষুধের সঙ্গে সংঘর্ষ
কিছু ওষুধের (বিশেষ করে অ্যান্টিকোয়াগুলান্ট বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ) সঙ্গে আমলকি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
আমলকি খাবেন কীভাবে?
# কাঁচা বা শুকনা: একেবারে কাঁচা খেতে পারেন বা সূর্যে শুকিয়ে নেওয়া আমলকি ভেজে বা গুড়-মিশিয়ে খাওয়া যায়।
# আমলকি জুস: সকালে খালি পেটে আমলকি রস পান করলে হজম ও ত্বক ভালো থাকে।
# আচার বা মোরব্বা: মুখরোচক আবার সংরক্ষণযোগ্য- এইভাবে বাচ্চারাও খেতে পছন্দ করে।

আমলকি ছোট হলেও এর উপকারিতা একেবারে বিশাল। শরীর, ত্বক, চুল, এমনকি মনকেও রাখে চাঙ্গা। তবে কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়- সঠিক পরিমাণে, সঠিক সময়ে খাওয়াটাই আসল বুদ্ধিমত্তা। তাই খেতে ভুলবেন না, কিন্তু খাওয়ার আগে একটু ভেবেই খান।
আপনি কীভাবে আমলকি খেতে পছন্দ করেন- জুস, মোরব্বা না আচার? নিচে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!
আপনার মতামত লিখুন :