দুধ চা আমাদের জীবনের প্রতিদিনকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর হোক বা বিকেলের আড্ডা—দুধ চা যেন এক ধরণের আবেগ। কিন্তু আপনি কি জানেন এই প্রিয় পানীয়টি যেমন উপকার করে, তেমনি অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খেলে হতে পারে বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি? আর যদি এই চায়ে মেশানো হয় মধু, তাহলে এর স্বাস্থ্যগুণ বেড়ে যেতে পারে বহুগুণ।
এই ফিচারে আমরা জানব দুধ চা ও মধুর গুণাগুণ, তাদের উপকারিতা-অপকারিতা, এবং সঠিক উপায়ে গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত।
চিনি ছাড়া দুধ চা স্বাস্থ্যকর
চা সাধারণত অনেকেই চিনি মিশিয়ে খান। কিন্তু চিনি আসলে চা-এর পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয়। চিনি ছাড়া দুধ চা খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত হয় না, ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
চা পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘পলিফেনল’ দেহের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আবার দুধে থাকে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ডি, যা হাড় মজবুত করে এবং শরীরকে শক্তি জোগায়। চিনি বাদ দিলে এই দুই উপাদানের গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে এবং শরীরও তা সহজে গ্রহণ করতে পারে।
প্রতিদিন দুধ চা খেলে কী হয়?
দুধ চা নিয়মিত খেলে কিছু উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া যায়: মানসিক প্রশান্তি ও ফোকাস বাড়ে, শারীরিক ক্লান্তি দূর হয়, মাথাব্যথা কমে, হজমে সহায়তা করে (বিশেষ করে আদা মেশালে) এবং ঠান্ডা-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তবে দিনে ২-৩ কাপের বেশি খেলে তার উল্টো প্রভাব পড়তে পারে। কারণ অতিরিক্ত চা পান করলে ক্যাফেইনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা দেহে গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, ঘুমের ব্যাঘাত বা দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করতে পারে।
দুধ চা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক ও অপকারিতা
যদিও দুধ চা অনেকের প্রিয়, তবে কিছু বিষয় খেয়াল না রাখলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। দুধ চা খালি পেটে খেলে অনেকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। চায়ে থাকা ট্যানিনস শরীরে আয়রন শোষণে বাধা দেয়। ক্যাফেইন বেশি খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অতিরিক্ত দুধ চা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স রয়েছে। চিনি ও দুধের পরিমাণ বেশি হলে ওজন বাড়তে পারে। তবে চিনি ছাড়া খেলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আদা দিয়ে দুধ চা: প্রাকৃতিক ওষুধের মতো
আদা দিয়ে দুধ চা খেলে তা শুধু স্বাদে নয়, উপকারিতায়ও হয়ে ওঠে অসাধারণ। আদায় আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা হজম শক্তি বাড়ায়, বমি ভাব দূর করে এবং ঠান্ডা-কাশি প্রতিরোধে কাজ করে।
তবে অতিরিক্ত আদা খাওয়া কিছু ক্ষেত্রে অম্বল বা গ্যাস্ট্রিক তৈরি করতে পারে। তাই পরিমাণ বজায় রাখা জরুরি।
দুধ চা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয়?
হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই দুধ চা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যারা খালি পেটে চা পান করেন, তাদের পেটে অ্যাসিড উৎপন্ন হয় বেশি। এছাড়া দুধ ও চা পাতা একসঙ্গে রান্না করে চা তৈরি করলে তা অনেক সময় হজমে সমস্যা করে।
চা পান করার সঠিক সময় হলো হালকা কিছু খাওয়ার পর। খালি পেটে নয়, আবার অতিরিক্ত ভরা পেটেও নয়।
দুধ চা ক্ষতিকর কেন?
দুধ চা ক্ষতিকর হতে পারে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা হয়, খালি পেটে খাওয়া হয়, চিনি বেশি মেশানো হয়, চায়ে ভেজাল উপাদান থাকে, দীর্ঘ সময় ধরে বারবার গরম ও করে খাওয়া হয়।
এছাড়াও, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে চা তৈরি পদ্ধতির উপরও।
চিনি ছাড়া দুধ চা খেলে কি ওজন বাড়ে?
চিনি ছাড়া দুধ চা ওজন বাড়ায় না বরং এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। চায়ে থাকা ক্যাফেইন বিপাক ক্রিয়া (metabolism) বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। আবার দুধে থাকা প্রোটিন দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কম হয়।
তবে দুধের পরিমাণ যদি খুব বেশি হয়, বা খুব ঘন দুধ ব্যবহার করা হয়, তাহলে কিছুটা ক্যালোরি যোগ হতে পারে। তাই চা বানানোর সময় সঠিক অনুপাতে পানি ও দুধ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
দুধ চা এবং মধু—দুইটিই আলাদা আলাদা ভাবে আমাদের শরীর ও মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে খেলে এই উপকারিতা অনেকগুণ বেড়ে যায়। দুধ চা যদি চিনি ছাড়া হয়, আদা মেশানো হয় এবং মধু যদি সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমের আগে খাওয়া হয়—তাহলে তা হতে পারে এক দারুণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো খাবার বা পানীয়ের ক্ষেত্রেই ‘মাত্রা’ বজায় রাখা সবচেয়ে জরুরি। অতিরিক্ততা যেকোনো ভালো জিনিসকেও ক্ষতিকর করে তুলতে পারে।
সুতরাং, চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিন, তবে এবার একটু সচেতন হয়ে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
আপনার মতামত লিখুন :