মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, পেশী গঠন, কোষের মেরামত ও হরমোন তৈরিতে যে উপাদানটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো অ্যামাইনো এসিড। এটি প্রোটিনের গাঠনিক একক হিসেবে পরিচিত এবং শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে।
খাদ্য থেকে প্রাপ্ত অ্যামাইনো এসিড দেহে শক্তি উৎপাদন থেকে শুরু করে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার মতো ব্যাপারে সহায়তা করে। তবে এর উপকারিতার পাশাপাশি অতিরিক্ত গ্রহণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
আজকে আমরা অ্যামাইনো এসিড সম্পর্কে যাবতীয় সবদিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব। চলুন প্রথমেই জেনে নেই অ্যামাইনো এসিড কী।
অ্যামাইনো এসিড হলো একধরনের জৈব উপাদান যা প্রাণীর দেহে প্রোটিন তৈরিতে সহায়তা করে। এটি মূলত কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে একটি অ্যামাইন দল ও একটি কার্বক্সিল দল থাকে।
আমাদের দেহে প্রোটিন হজমের মাধ্যমে অ্যামাইনো এসিড তৈরি হয় যা পরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
প্রতিটি অ্যামাইনো এসিডকে শনাক্ত করার জন্য একটি করে সংকেত বা সংকেতধর্মী চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। সাধারণত তিন অক্ষরের ছোট রূপে এই সংকেতগুলো ব্যবহৃত হয়।
যেমন: গ্লাইসিন, এলানিন, ভালিন, লিউসিন ইত্যাদি। এই সংকেতগুলো জৈবিক রূপান্তরের সময় প্রোটিন গঠনে সাহায্য করে।

অ্যামাইনো এসিড কত প্রকার ও কী কী?
মানবদেহে ২০ প্রকার অ্যামাইনো এসিড ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে কিছু দেহে নিজে থেকেই তৈরি হয়, আবার কিছু আমাদের খাদ্য থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই অনুযায়ী, অ্যামাইনো এসিড দুই প্রকার:
আবশ্যক অ্যামাইনো এসিড:
যেগুলো দেহে তৈরি হয় না, তাই খাদ্য থেকে নিতে হয়। যেমন- লিউসিন, আইসোলিউসিন, ভালিন, লাইসিন, মিথিওনিন, ফেনিলএ্যালানিন, থ্রিওনিন, ট্রিপটোফান, হিসটিডিন।
অনাবশ্যক অ্যামাইনো এসিড:
যেগুলো দেহে নিজেই তৈরি করতে পারে। যেমন- এলানিন, অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড, গ্লুটামিক অ্যাসিড, সেরিন ইত্যাদি।
মানবদেহে অ্যামাইনো এসিড কেন প্রয়োজন?
অ্যামাইনো এসিড মানবদেহের কোষ গঠন, হরমোন তৈরি, পেশী গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে। এটি দেহে শক্তি জোগায়, কোষের ক্ষয়পূরণ করে এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।
অ্যামাইনো এসিডের উপকারিতা
- দেহে প্রোটিন তৈরি করে
- পেশী গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
- হরমোন ও এনজাইম তৈরিতে সহায়তা করে
- ত্বক, চুল ও নখের গঠন বজায় রাখে
- মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
- রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
অ্যামাইনো এসিডের অপকারিতা
অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যামাইনো এসিড গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন:
- কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি
- হজমে সমস্যা বা বমিভাব
- রক্তচাপ বা রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা
- দীর্ঘদিন অতিরিক্ত সেবনে হরমোনে প্রভাব পড়া
- ঘুমের সমস্যা অথবা মাথা ঘোরা
অ্যামাইনো এসিড যুক্ত খাবার
প্রাকৃতিকভাবে অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায় এমন কিছু খাবার হলো:
- ডিম
- গরু ও মুরগির মাংস
- মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্য
- ডাল ও ছোলা
- বাদাম ও বীজ
- দুধ ও দুধজাত খাবার
- সয়াবিন ও টোফু
- পালং শাক ও অন্যান্য শাকসবজি
অ্যামাইনো এসিড মানবদেহের জন্য একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রোটিনের মূল উপাদান হওয়ায় শরীরের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে এটি সঠিকভাবে ও পরিমাণমতো গ্রহণ করা উচিত। প্রাকৃতিক খাবার থেকেই অ্যামাইনো এসিড সংগ্রহ করাই বেশি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর।