ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ত্রিফলার উপকারিতা-অপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম
ত্রিফলা ও এর গুঁড়া ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ত্রিফলা একটি বহুল ব্যবহৃত এবং প্রাচীন ভেষজ উপাদান। ত্রিফলা শব্দের অর্থই হলো তিনটি ফল- হারিতকি, বহেরা ও আমলকি।

এই তিনটি ফল একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় একটি শক্তিশালী ও উপকারী ভেষজ মিশ্রণ, যা বহু বছর ধরে হজম শক্তি বাড়ানো, দেহ পরিষ্কার রাখা, ত্বকের যত্ন এবং রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন এর রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা, তেমনি কিছু নিয়ম না মানলে দেখা দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও।

সকালে খালি পেটে ত্রিফলা খেলে কী হয়?

সকালে খালি পেটে ত্রিফলা সেবনের ফলে দেহে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। নিচে সকালে খালি পেটে ত্রিফলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

- হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়  
- পেট পরিষ্কার থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়  
- শরীর ডিটক্স বা পরিশোধন হয়  
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে  
- মুখে ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি কমে যেতে পারে  
- সারা দিনের জন্য সতেজতা তৈরি হয়  

তবে শুরুতে কারও কারও ক্ষেত্রে হালকা পেটের গ্যাস বা পেট খারাপের সমস্যা হতে পারে, যা কিছুদিন পর স্বাভাবিক হয়ে যায়।

ত্রিফলা খেলে কি কোলেস্টেরল কমে?

হ্যাঁ, নিয়মিত ত্রিফলা সেবনে রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ (লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) কমে এবং ভালো চর্বি (হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) বৃদ্ধি পায়। এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।

ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা

প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে যারা আগ্রহী, তাদের জন্য ত্রিফলা এক পরীক্ষিত ও কার্যকর উপাদান। এটি দেহের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার, হজমশক্তি বৃদ্ধিসহ নানা উপকারে আসে।

নিয়মিত ত্রিফলা খাওয়ার ফলে শরীর যেমন রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয়, তেমনি রক্ত বিশুদ্ধ হয়, ত্বক ঝলমলে হয় এবং দেহ থাকে সজীব ও সতেজ। এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব ত্রিফলা খাওয়ার নানা উপকারিতা ও এর কার্যকারিতার পেছনের বৈজ্ঞানিক কারণসমূহ। নিচে ত্রিফলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

- হজম শক্তি বৃদ্ধি  
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে  
- ওজন কমাতে সহায়তা  
- ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে  
- চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে  
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়  
- চুল পড়া কমায় ও চুলের গুণমান ভালো রাখে  
- যকৃত ও পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা উন্নত করে  
- মূত্রাশয় ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়  
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

ত্রিফলা খাওয়ার অপকারিতা

ত্রিফলা প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হারিতকি, বহেরা ও আমলকি এই তিনটি ফলের মিশ্রণে তৈরি ত্রিফলা সাধারণত দেহের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে, রক্ত বিশুদ্ধকরণে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হিসেবে পরিচিত।

তবে যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদানের মতো ত্রিফলাও যদি নিয়ম না মেনে বা মাত্রার অতিরিক্ত সেবন করা হয়, তাহলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যথাযথ মাত্রা ও নিয়ম না মেনে ত্রিফলা খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন-

- অতিরিক্ত খেলে পেটের গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে  
- অতিরিক্ত সময় ধরে খেলে শরীরে অতিরিক্ত পানি ক্ষয় হতে পারে  
- কিছু ক্ষেত্রে পেট ব্যথা বা বমিভাব হতে পারে  
- দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরে অতিরিক্ত শুষ্কতা তৈরি করতে পারে  

গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ত্রিফলা সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রোজ সকালে ত্রিফলা ভেজানো জল খান? জেনে নিন এই ফলের গুণাবলী - Bengali News |  Health benefits of ayurvedic gem triphala - TV9 Bangla News

ত্রিফলা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা

ত্রিফলা রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে খালি পেটে খাওয়া হলে নিচের উপকারগুলো পাওয়া যায়:

- পেট পরিষ্কার হয়  
- হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়  
- রক্ত বিশুদ্ধ হয়  
- মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়  
- ত্বক উজ্জ্বল হয়  
- শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়  
- শরীরে হালকা ও সতেজ অনুভব হয়  

ত্রিফলা কি প্রতিদিন খাওয়া যায়?

হ্যাঁ, সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ মেনে ত্রিফলা প্রতিদিন খাওয়া যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করলে মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়াও ভালো, যেন শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়।

ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময় কখন?

# সকালে খালি পেটে: পানির সঙ্গে গুঁড়া বা ভেজানো পানি খেলে হজমে সাহায্য করে।  
# রাতে ঘুমানোর আগে: কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে রাতে খেলে পেট পরিষ্কার হয়।

খাবার খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে বা পরে খাওয়া উত্তম।

ত্রিফলা টানা কতদিন খাওয়া যায়?

ত্রিফলা সাধারণত একটানা ১ মাস থেকে ৩ মাস পর্যন্ত খাওয়া যায়। এর পর এক-দুই সপ্তাহ বিরতি নিয়ে আবার খাওয়া যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন।

ত্রিফলা প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। এটি বহু শারীরিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর হলেও সঠিক নিয়মে না খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ত্রিফলা সেবনের আগে নিজের দেহের অবস্থা অনুযায়ী একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য ত্রিফলা হতে পারে একটি কার্যকর সঙ্গী।