চিনি এক প্রকার সুমিষ্ট পদার্থ যা গাছ বা ফলের রস থেকে প্রস্তুত করা হয়। ভারতবর্ষে সাধারণত আখের রস থেকে চিনি তৈরি করা হয়। এছাড়া বীট এবং ম্যাপল চিনির অন্য দুটি প্রধান বনজ উৎস।
চিনি কি প্রাকৃতিক খাদ্য সংরক্ষক?
চিনির গাঢ় দ্রবণ বা সিরাপের সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া কোষের মধ্যস্থ জলীয় অংশকে চিনির গাঢ় দ্রবণ অভিস্রবণ বা অসমোসিসপ্রক্রিয়ায় শুষে নেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া বিনষ্ট হয়। এছাড়া জ্যাম, জেলি, আচার, কাসুন্দি, মোরব্বা, কমলালেবুর আচার সংরক্ষণে চিনি পচনরোধকরূপে ব্যবহৃত হয়।
চিনি অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তবে পরিমিত ও সঠিক প্রয়োগে এর কিছু উপকারিতা রয়েছে।
চিনির উপকারিতা
শক্তি যোগায়
চিনি হলো এক প্রকার কার্বোহাইড্রেট, যা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। এটি গ্লুকোজে ভেঙে রক্তে দ্রুত মিশে যায় এবং শরীরকে তাত্ক্ষণিক শক্তি দেয়।
রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে সাহায্য করে
রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে ১ চামচ চিনি পানিতে মিশিয়ে খেলে তা সাময়িকভাবে প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কে গ্লুকোজ সরবরাহ
মস্তিষ্ক কাজ করতে গ্লুকোজ ব্যবহার করে। চিনি সেই গ্লুকোজের একটি সহজ উৎস।
খাবারের স্বাদ বাড়ায়
চিনি বিভিন্ন খাবারের স্বাদ উন্নত করে, যা খাবার খেতে ইচ্ছা বাড়ায়।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে
যারা ডায়াবেটিসের ইনসুলিন নিচ্ছেন, তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) চিনি দ্রুত সেই মাত্রা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
রোগীর শরীরে দ্রুত গ্লুকোজ সরবরাহে কার্যকর
জ্বর, ডায়রিয়া বা দুর্বলতা থাকলে ডাবের পানি বা ওরস্যালে একটু চিনি মিশিয়ে দিলে শরীর দ্রুত শক্তি ফিরে পায়।
অতিরিক্ত চিনি গ্রহনের বেশ কিছু অপকারিতা আছে, যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
চিনির অপকারিতা
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়- বেশি চিনি খেলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
স্থূলতা- চিনি থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি আসে, যা শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয় এবং ওজন বাড়িয়ে তোলে।
হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি- গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
দাঁতের ক্ষয়- চিনি দাঁতের ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে এবং অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়।
চিন্তার অস্থিরতা ও মনঃসংযোগের সমস্যা- অতিরিক্ত চিনি রক্তে শর্করার হঠাৎ উত্থান ও পতনের মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে।
লিভারের সমস্যা- ফ্রুক্টোজ জাতীয় চিনি (যেমন হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ) অতিরিক্ত সেবনে লিভারে চর্বি জমে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে।
চর্ম সমস্যা- চিনি ইনসুলিন বৃদ্ধি করে যা চর্মে ব্রণ ও বার্ধক্যের লক্ষণ বাড়ায়।
আসক্তি তৈরি করে- চিনি খাওয়ার পর ‘ডোপামিন’ নিঃসরণ হয়, যা মস্তিষ্কে আনন্দ দেয় — ফলে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা বাড়তে থাকে, যা ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিণত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :