রোদে পুড়ে গিয়ে ত্বকটা যখন জ্বলে ওঠে, তখন কেউ একজন বলেন, ‘একটু অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে দেখো!’
আবার পেটের গোলমালে দাদি বলেন, ‘ঘৃতকুমারীর রস খেলে আরাম পাবে!’ এমন অগণিত উপকারের কারণে অ্যালোভেরা ধীরে ধীরে আমাদের ঘরোয়া চিকিৎসার অন্ধকার কৌটাগুলো থেকে বেরিয়ে এসে জায়গা করে নিয়েছে রান্নাঘর থেকে বাথরুমের তাক পর্যন্ত।
আজকাল স্বাস্থ্য ও রূপচর্চার জগতে অ্যালোভেরা এক অতি পরিচিত নাম। একে অনেকে ঘৃতকুমারী নামেও চেনেন। ত্বক থেকে শুরু করে হজমের সমস্যা, এমনকি চুলের যত্নেও অ্যালোভেরার ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
কিন্তু যেটা আমরা অনেকেই জানি না- এই উপকারী উদ্ভিদটির কিছু অপকারিতাও আছে, বিশেষ করে যখন তা মাত্রাতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়। তাই অ্যালোভেরার ব্যবহার শুরু করার আগে এর ভালো-মন্দ দুই দিকই জানা দরকার।
চলুন, একসঙ্গে জেনে নিই অ্যালোভেরার সেই গাছছোঁয়া গল্প- যেখানে উপকারের সঙ্গে লুকিয়ে আছে কিছু সতর্কবার্তাও।
অ্যালোভেরা/ঘৃতকুমারী কি?
অ্যালোভেরা একটি কাণ্ডবিহীন, কাঁটা যুক্ত গাছ যা মূলত মরু অঞ্চলে জন্মায়। পাতার ভিতরের জেল জাতীয় উপাদানই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় চিকিৎসা ও সৌন্দর্যচর্চায়। ঘৃতকুমারী নামেও পরিচিত এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালো ভেরা ।
অ্যালোভেরা খেলে কি হয়?
অ্যালোভেরা খেলে হজমশক্তি ভালো হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং শরীরের বিষাক্ত টক্সিন দূর হয়। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। তবে অতিরিক্ত সেবনে পেট খারাপ, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা, এমনকি কিডনির সমস্যা হতে পারে।
ঘৃতকুমারীর উপকারিতা
ঘৃতকুমারীর উপকারিতা অনেক, যেমন:
ত্বক সুস্থ রাখা: অ্যালোভেরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে ভরপুর, যা ব্রণ, দাগ ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়ক: জেলের মধ্যে থাকা এনজাইম হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে: এর মধ্যে থাকা ভিটামিন এ, সি ও ই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে: চুল পড়া কমানো ও খুশকি দূর করতে অ্যালোভেরা কার্যকর।
ঘৃতকুমারীর অপকারিতা
যদিও অ্যালোভেরা অনেক উপকারে আসে, কিন্তু এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে:
# অতিরিক্ত সেবনে ডায়রিয়া ও পেটের সমস্যা হতে পারে।
# গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
# কিছু মানুষের অ্যালার্জি হতে পারে, যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি বা লালচে ভাব।
# দীর্ঘমেয়াদে সেবনে কিডনি ও যকৃতের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
কাঁচা অ্যালোভেরা খেলে কি হয়?
কাঁচা অ্যালোভেরা খেলে শরীরের ডিটক্সিফিকেশন হয়, কিন্তু অবশ্যই পরিমাণমতো খেতে হবে। বেশি খেলে হতে পারে ডায়রিয়া, বমি কিংবা তলপেটের ব্যথা। খাওয়ার আগে অবশ্যই জেলের হলুদ অংশ (যা `অ্যালোইন` নামে পরিচিত) ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে কারণ এটি বিষাক্ত হতে পারে।
অ্যালোভেরা কি খুশকি দূর করতে কাজ করে?
হ্যাঁ, অ্যালোভেরা খুশকি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। এর অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান চুলের স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে, স্ক্যাল্পের খুশকি কমায় এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে।
পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা
পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরা নানা দিক থেকে উপকারী:
# শেভ করার পর ত্বকের জ্বালা ও ইনফেকশন কমায়।
# টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে (গবেষণামূলক পর্যায়ে)।
# দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস ও ক্লান্তি দূর করতে পারে।
# চুল পড়া রোধ করে এবং স্ক্যাল্প হেলদি রাখে।
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা
- ব্রণ কমাতে সাহায্য করে
- রোদে পোড়া ত্বক আরাম দেয়
- রিঙ্কেল বা বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে
- ত্বক হাইড্রেট করে ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়
অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি হয়
মুখে অ্যালোভেরা মাখলে তা ত্বক ঠান্ডা রাখে, ব্রণ কমায়, দাগ হালকা করে এবং ত্বক মসৃণ করে। তবে সংবেদনশীল ত্বকে আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া জরুরি, কারণ কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে।
# ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে
# ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
# পিগমেন্টেশন ও দাগ কমাতে সহায়তা করে
# স্কিনে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ফলে বয়সের ছাপ কম দেখা যায়

অ্যালোভেরা একটি প্রকৃতির আশীর্বাদ, তবে যেকোনো ভেষজ উপাদানের মতোই এর ব্যবহারও সচেতনভাবে করা উচিত। নিয়মিত ও পরিমিত ব্যবহারে এটি যেমন উপকারে আসতে পারে, তেমনি অজান্তে অপকারিতার কারণও হতে পারে। তাই ব্যবহার শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার মতামত লিখুন :