ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

আখরোটের উপকারিতা-অপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের সুপারফুড আখরোট ছবি: সংগৃহীত

আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের খাবারের তালিকায় সুপারফুড হিসেবে আখরোটের নাম শীর্ষে।

এই বাদামজাতীয় খাবারটি শুধু মস্তিষ্ক নয়, পুরো শরীরের জন্যই অনেক উপকারী। তবে প্রতিটি ভালো জিনিসের মতো, এরও কিছু সতর্কতা রয়েছে। চলুন জেনে নিই আখরোটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

আখরোটের উপকারিতা

আখরোট একটি পুষ্টিকর বাদাম যা প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর। এর কিছু প্রধান উপকারিতা হলো-

# মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়: আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।  
# হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো: এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।  
# অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের আধার: শরীরের কোষে ক্ষয় কমিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।  
# চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী: আখরোটে থাকা বায়োটিন চুল পড়া কমায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।  
# ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়।

আখরোটের অপকারিতা 

আখরোট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:

# অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি: এতে উচ্চমাত্রায় ক্যালোরি ও ফ্যাট থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়াতে পারে।  
# অ্যালার্জির ঝুঁকি: অনেকের আখরোটে অ্যালার্জি হতে পারে, যার ফলে চুলকানি, ফুসকুড়ি, এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে।  
# হজমে সমস্যা: বেশি খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

আখরোট খেলে কি কোষ্ঠকাঠিন্য হয়?

না, সাধারণত আখরোট খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। বরং এতে থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু মানুষের পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি হতে পারে।

Walnuts - Dr Earth

আখরোটতে কি ভিটামিন থাকে?

আখরোটে রয়েছে:

# ভিটামিন ই– ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী  
# ভিটামিন বি৬– মস্তিষ্ক ও নার্ভের কার্যক্রমে সহায়ক  
# ফোলেট– কোষের গঠন ও বিভাজনে সাহায্য করে  
# ম্যাগনেশিয়াম ও কপার– হাড়ের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক

আখরোট খাওয়ার নিয়ম

# প্রতিদিন ৩–৫টি আখরোট খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী।  
# খালি পেটে অথবা সকালের নাস্তায় খাওয়া সবচেয়ে ভালো।  
# পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সহজ হয় এবং পুষ্টিগুণ সহজে শোষিত হয়।

আখরোট ও মধুর একসঙ্গে উপকারিতা ও নিয়ম

আখরোট ও মধুর সংমিশ্রণ একটি শক্তিশালী ইমিউন বুস্টার। এর উপকারিতা:

# শরীরে শক্তি ও এনার্জি জোগায়
# মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
# ডিপ্রেশন ও ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে

খাওয়ার নিয়ম:

সকালে খালি পেটে ৩টি আখরোটের সাথে ১ চামচ মধু খেলে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আখরোট খেলে:

# ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে
# গর্ভবতীর স্ট্রেস ও অবসাদ কমায়
# হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে
# ফোলেট ও ওমেগা-৩ থাকার কারণে গর্ভাবস্থার জন্য অত্যন্ত উপকারী

তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

আখরোট কখন ও কিভাবে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়?

# সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী  
# রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া ভালো  
# মধু বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ আরও বাড়ে  

তবে, খাওয়ার পরপরই পানি না খাওয়াই ভালো, যাতে হজমে সমস্যা না হয়

খালি পেটে আখরোট খাওয়ার উপকারিতা

# হজম শক্তি বাড়ায়  
# ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়  
# সকালে খালি পেটে খেলে সারাদিন এনার্জি পাওয়া যায়  
# শরীর ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে

আখরোট নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার। তবে যেকোনো কিছুই পরিমিতভাবে খাওয়াই শ্রেয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সামান্য পরিমাণ আখরোট যুক্ত করলে শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে অ্যালার্জি বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।