চন্দন একটি সুগন্ধি ভেষজ উদ্ভিদ। চন্দনের ইংরেজি নাম ‘স্যান্ডাল উড’। একদিকে ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে হুটহাট বৃষ্টি। রোদ আর বৃষ্টির এই খেলায় ত্বকের ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এ সময় ত্বকের সুরক্ষায় চন্দন হতে পারে রূপচর্চার সঙ্গী। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং রকমারি সমস্যা দূর করতে চন্দন বেশ কার্যকর। গুঁড়া, তেল, প্যাক, স্ক্রাব—নানাভাবে ব্যবহার করা যায় চন্দন। চন্দন গাছ ২ প্রকার- ১/সাদা চন্দন বা শ্বেতচন্দন, ২/রক্ত চন্দন বা লাল চন্দন
সাদা চন্দন শুধু সৌন্দর্যচর্চা নয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, ধর্মীয় কাজ এবং সুগন্ধির জগতে খুব জনপ্রিয়।
সাদা চন্দনের উপকারিতা
ত্বকের যত্নে: ব্রণ ও দাগ দূর করে: চন্দনের পেস্ট মুখে লাগালে ব্রণ শুকিয়ে যায় এবং দাগ হালকা হয়।
ত্বক ঠান্ডা রাখে: সানবার্ন বা অতিরিক্ত রোদে পোড়া ত্বকের জন্য দারুণ।
অয়েলি স্কিনে নিয়ন্ত্রণ আনে: সাদা চন্দন ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে।
ত্বক উজ্জ্বল করে: নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক নরম ও দীপ্তিময় হয়।
সুগন্ধি ও সুস্থতা: চন্দন কাঠ ও তেলের ঘ্রাণ খুবই প্রশান্তিদায়ক। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ঘুম ভালো আনে।
ঔষধি গুণ: জ্বর, সর্দি-কাশিতে কার্যকর: আয়ুর্বেদে এটি শরীর ঠান্ডা করতে ও সংক্রমণ কমাতে ব্যবহৃত হয়। মূত্রতন্ত্রের রোগে উপকারী: ইউরিনারি ইনফেকশন বা পেশাবের জ্বালাপোড়া কমায়।
অ্যান্টিসেপটিক: চন্দন তেল ক্ষত বা ত্বকের সংক্রমণে জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।
আধ্যাত্মিকতা ও পূজায়: সাদা চন্দনের পেস্ট দিয়ে তিলক দেওয়া হয় পূজার সময়। ধ্যান ও যোগব্যায়ামে ব্যবহার হয় একাগ্রতা বাড়াতে।
রক্ত চন্দন গাছ একটি মূল্যবান ওষুধি গাছ। এটি মূলত ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে পাওয়া যায়, তবে অনেক দেশে এর চাষও হয়।
রক্ত চন্দনের উপকারিতা
ঔষধি গুণাবলি: রক্তচন্দনের গুঁড়া আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যবহৃত হয়। এটি জ্বর, কফ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং ত্বকের রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। রক্ত পরিশোধক হিসেবে এর ব্যবহার প্রচলিত।
সৌন্দর্যচর্চায়: রক্তচন্দনের গুঁড়া মুখে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, ব্রণ ও দাগ দূর হয়। ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
কাঠ হিসেবে ব্যবহার: রক্তচন্দনের কাঠ অত্যন্ত কঠিন ও লালচে রঙের, যা খুবই মূল্যবান। জহরত বক্স, মূর্তি, আসবাবপত্র ও সংগীত যন্ত্র (যেমন বীণা বা সরোদ) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যবহার: রক্ত চন্দন হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। এটি তিলক বা পূজার উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
চন্দনের অনেক উপকারিতা থাকলেও, কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
চন্দনের অপকারিতা
অ্যালার্জি বা র্যাশ: সংবেদনশীল ত্বকে চন্দন লাগালে চুলকানি, লালচে ভাব, বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।
শুষ্ক ত্বক: চন্দন ত্বককে শীতল ও শুষ্ক করে, তাই শুষ্ক ত্বকে বেশি ব্যবহারে চামড়া টানটান ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা : চন্দনের ধূপ বা তেল দীর্ঘ সময় শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে কারো অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ ব্যবহার: কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধে চন্দনের নির্যাস থাকে। বেশি পরিমাণে খেলে কিডনির ওপর চাপ পড়তে পারে বা মূত্রতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে। কখনো কখনো বমি, পেটব্যথা বা মাথা ঘোরা হতে পারে।
গর্ভবতী ও শিশুরা: গর্ভবতী নারী ও ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে চন্দনের তেল বা ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।
আপনার মতামত লিখুন :