প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বহু বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে ভেষজ গাছপালাগুলো। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হলো অর্জুন গাছ। আয়ুর্বেদ, ইউনানি এবং প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসায় এই গাছের ছাল, পাতা ও ফল বহু রকম রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তবে উপকারিতার পাশাপাশি কিছু সতর্কতা বা অপকারিতাও রয়েছে, যেগুলো জানা জরুরি। চলুন জেনে নিই অর্জুন গাছের বিভিন্ন অংশের গুণাগুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে।
অর্জুন গাছের উপকারিতা
# হৃদরোগ প্রতিরোধে উপকারী
অর্জুন গাছের ছাল হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
# অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি
এটি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
# কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
নিয়মিত সেবনে এলডিএল কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
# হজমে সাহায্য করে
পাচনতন্ত্রের জন্যও অর্জুন গাছ বেশ উপকারী, গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়।
# ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এর ছাল ব্যবহার করা হয়।
অর্জুন গাছের অপকারিতা
# অতিরিক্ত সেবনে ক্ষতি হতে পারে
অতিরিক্ত ছাল বা পাতার সেবনে লিভার ও কিডনির উপর চাপ পড়তে পারে।
# ওষুধের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া
যেকোনো হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সঙ্গে একসাথে সেবন বিপদজনক হতে পারে।
# গর্ভবতী বা স্তন্যদায়ী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে
এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অর্জুন গাছের ছাল বা অন্যান্য অংশ ব্যবহার না করাই ভালো।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা
উপকারিতা:
# হৃদপিণ্ডের টোন উন্নত করে
# উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
# চর্মরোগে উপকারী
# প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমায়
অপকারিতা:
# অতিরিক্ত ছাল খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে
# কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথা বা ক্লান্তি অনুভব হতে পারে

অর্জুন গাছের পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
উপকারিতা:
# মুখের ঘা ও ইনফেকশনে ব্যবহৃত হয়
# রক্ত বিশুদ্ধ করে
# কফ ও সর্দির উপশমে উপকারী
অপকারিতা:
# বেশি পাতা খেলে বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে
# অ্যালার্জি প্রবণ ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে
অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
উপকারিতা:
# দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করে
# হজমে সাহায্য করে
# অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
অপকারিতা:
# অতিরিক্ত সেবনে পাতলা পায়খানা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে
অর্জুন গাছের ছাল খেলে কি হয়?
অর্জুন ছাল সেবনে সাধারণত হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়া এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয়।
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
# ৫-৬ গ্রাম শুকনো ছাল পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হয়।
# সকালে ঐ পানি হালকা গরম করে খালি পেটে পান করা যেতে পারে।
# এটি প্রতিদিন ৭-১০ দিন খাওয়া যেতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সেবনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
অর্জুনের ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম
# প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আধা চা চামচ অর্জুন ছালের গুড়া এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে খেতে পারেন।
# চাইলে মধুর সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
# ১ মাসের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো, মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে আবার শুরু করতে পারেন।
অর্জুন গাছ প্রকৃতির এক অসাধারণ উপহার, বিশেষ করে হৃদরোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকরী। তবে যেকোনো ভেষজ উপাদানের মতোই, এর সঠিক মাত্রা ও ব্যবহার জানা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করলে সুফলের বদলে হতে পারে অপকার।