ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

কফি খাওয়ার উপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম
ব্ল্যাক কফি। ছবি: সংগৃহীত

শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষায় গরম এক মগ কফি পেলে দিনটাই উষ্ণ হয়ে যায় যেন। হালকা তিতকুটে এই পানীয় বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়। কফির সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার সবই যে ইতিবাচক, তা কিন্তু নয়। বরং কফি সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক তথ্যও পাওয়া যায়। তবে সেসব প্রসঙ্গ আসে অতিরিক্ত কফি খেলে। অতিরিক্ত কোনোকিছুই যে ভালো নয়, এ কথা তো আমরা সবাই জানি। এদিকে পরিমিত কফি পান করলে তা শরীরের নানা উপকারে আসে।  

এক কাপ কফি পান করলে তা আপনাকে সারাদিন চাঙ্গা রাখতে কাজ করবে। দিনভর আপনি থাকবেন কর্মক্ষম। এ ছাড়াও কফিকে ভালোবাসার জন্য রয়েছে আরও অনেক কারণ। আপনি ব্ল্যাক কফি খান কিংবা এসপ্রেসো, সব ধরনের কফিই আপনার জন্য কিছু না কিছু উপকার বয়ে আনবে। পুষ্টিবিদরা এমনটাই জানিয়েছেন। এটি আরও নানাভাবে শরীরের জন্য উপকারী হিসেবে প্রমাণিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক কফি খেলে কী হয়-অনেকেই সারাদিন চাঙা থাকতে দিনের শুরু করতে চান এক মগ কফিতে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের মাঝামাঝি যেকোনো সময় কফি পান করার জন্য আদর্শ।

আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সকালের প্রথম খাবার হিসেবে অর্থাৎ খালি পেটে কফি পান করার অভ্যাস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।  

কফি এতটাই খাওয়া যাবে রোজ, তার বেশি নয়

কফি পানের স্বাস্থ্য উপকারিতা

স্মৃতিশক্তি বাড়ে: বয়স বাড়লে আমাদের মস্তিস্কের দক্ষতা হ্রাস পায়।  মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সকালে ব্ল্যাক কফি পান করতে হবে। এতে মস্তিষ্কের স্মৃতি শক্তি ও কার্যকারিতা বাড়বে।  
 
ব্যায়ামের সময় পারফরম্যান্স উন্নত করে: ব্ল্যাক কফির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি আপনার শারীরিক পারফরম্যান্সকে দারুণভাবে উন্নত করে এবং একটি ওয়ার্কআউট করার সময় শতভাগ অ্যাক্টিভ থাকতে সহায়তা করে। এই কারণেই জিমের প্রশিক্ষকরা ব্যায়াম করতে আসার আগে ব্ল্যাক কফি খেতে বলেন।  

লিভারের জন্য উপকারি: লিভারটি আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । জানেন কি আপনার লিভার ব্ল্যাক কফি পছন্দ করে? ব্ল্যাক কফি লিভারের ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং অ্যালকোহলিক সিরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।  

বুদ্ধিমান করে তোলে: কফির একটি মনস্তাত্ত্বিক উদ্দীপক রয়েছে যা মানসিক শক্তি, মেজাজ উন্নত করার ক্ষমতা রাখে। এভাবে আপনাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিমান ও স্মার্ট করে তোলে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ : হৃদযন্ত্রের প্রদাহ কমায় ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।   

ডায়াবেটিস এড়াতে : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে।  

ক্ষুধা হ্রাস: কফি পানে আমাদের খাবার গ্রহণের আগ্রহ কমিয়ে দেয় ও দীর্ঘ সময় কর্মশক্তি দিয়ে ক্লান্তি দূর করে। এজন্য আমরা যখন ওজন কমাতে ডায়েট করি তখন কফি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।  

চোখের জন্যও ভালো: কফি পানে আমাদের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয় এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে।  

মাইগ্রেন : ২-৩ কাপ ব্ল্যাক কফি পান করলে মাইগ্রেন ব্যথা দ্রুত কমতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে: ক্যাফেইন আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অতিরিক্ত চর্বি বার্ন করতে সাহায্য করে। ব্ল্যাক কফিতে খুব কম ক্যালোরি রয়েছে, এজন্য নিয়মিত চিনি, কফিমেট বা ক্রিম না দিয়ে এক মগ ব্ল্যাক কফি পান করলে দ্রুত ওজন কমবে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে: ক্যান্সার আজকের বিশ্বে অন্যতম মরণব্যাধি হয়ে উঠেছে। কফি লিভার, স্তন এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।  
 

কফি পানের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

১. সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে এই

২. অ্যাসিড জমলে হজমে সমস্যা হতে পারে। 

৩. কফির বীজে ক্যাফেইন ও অন্যান্য অম্লীয় উপাদান থাকে যা পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার, গ্যাসট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষম ব্যহত হতে পারে।

৫. কফি শরীরে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করলেও এটি স্নায়ুদতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে৷ দীর্ঘদিন ধরে একটানা প্রচুর পরিমাণে কফি পানে আমাদের স্বাভাবিক উদ্দীপনাও নষ্ট হতে পারে৷

৬. দিনে তিন কাপ কফিতেই সন্তুষ্ট থাকুন। আর বাড়তি ওজনের চিন্তা থাকলে কফির সঙ্গে দুধ-চিনি যোগ না করে শুধু রং কফি পানের অভ্যাস করুন।  

'হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেল্‌থ'-এর মতে, কম ক্যালোরির সুষম খাবার ও পরিমিত ব্যায়ামের সঙ্গে দিনে কম করে ৩–৪ কাপ বা ৭২০–৯০০ মিলি-র মতো কফি খেলে সব দিক বজায় থাকে। তবে পেশিবহুল সুঠাম শরীর চাইলে আরও বেশি খেতে পারেন।