বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তার মধ্যেও একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল। রান্না থেকে শুরু করে ত্বক ও চুলের যত্ন- সব ক্ষেত্রেই অলিভ অয়েলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
এটি শুধু খাদ্য নয়, বরং একধরনের চিকিৎসা ও রূপচর্চার উপাদানও বটে। তবে এর উপকারিতা যেমন বিস্তৃত, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে, যা জানাটা জরুরি। আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানব অলিভ অয়েলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল হলো জলপাই ফল থেকে তৈরি একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তেল। এটি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় তেল যা এখন বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসচেতনদের মাঝে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অলিভ অয়েলকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়-
# এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
# ভার্জিন অলিভ অয়েল
# রিফাইন্ড অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল তেল কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়?
# রান্নায় ব্যবহার- বিশেষত হালকা ভাজা বা সালাদ ড্রেসিংয়ে
# ত্বকের যত্নে- ময়েশ্চারাইজার, স্ক্রাব ও ম্যাসাজ অয়েল হিসেবে
# চুলের যত্নে- চুল মসৃণ ও স্বাস্থ্যবান রাখতে
# ওষুধি ব্যবহার-হৃদরোগ, হজম সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণে
# বিউটি প্রোডাক্টে উপাদান হিসেবে- লোশন, লিপ বাম, হেয়ার মাস্ক ইত্যাদিতে
ওয়েল ক্লিনজিং ও মেকআপ রিমুভার হিসেবেও জনপ্রিয়
অলিভ অয়েল ব্যবহারের উপকারিতা
# হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
# কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়।
# ত্বককে হাইড্রেটেড ও উজ্জ্বল রাখে
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই থাকার কারণে ত্বকের জৌলুস বাড়ায়।
# চুলের গোঁড়া মজবুত করে
চুল পড়া কমায় ও খুশকি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
# অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব ফেলে
শরীরের প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
# হজমে সহায়তা করে
কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং পাচনতন্ত্রকে সুষ্ঠু রাখে।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা
- এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষয় রোধ করে।
- হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
- মেটাবলিজম ভালো করে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
- অন্ত্র পরিষ্কার রাখে ও হজমের উন্নতি ঘটায়।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেলে দেহের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
অলিভ অয়েল ব্যবহারের অপকারিতা
# অতিরিক্ত সেবনে ওজন বৃদ্ধি
এতে ক্যালোরি বেশি, অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
# হজমের সমস্যা হতে পারে
বেশি খেলে গ্যাস্ট্রিক বা ডায়রিয়া হতে পারে।
# ত্বকে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ব্রণ হতে পারে
যারা ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ে ভোগেন, তাদের জন্য অলিভ অয়েল ব্ল্যাকহেড বা ব্রণ বাড়াতে পারে।
# তাপমাত্রা বেশি হলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়
অলিভ অয়েল উচ্চ তাপে ব্যবহার করলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
# এলার্জি সমস্যা
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
অলিভ অয়েল নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং বহুমুখী তেল, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে শরীর ও সৌন্দর্য উভয় ক্ষেত্রেই আশ্চর্যজনক উপকারে আসে। তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। তাই ব্যবহারের নিয়ম এবং পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।