প্রাকৃতিকভাবেই চারপাশে অনেক দরকারি উদ্ভিদ জন্মে। তবে সবকিছু আমাদের চেনা-জানা হয় না। পথে চলতে গিয়ে অজানা কত উদ্ভিদের ফুল দেখে আমরা মুগ্ধ হই। কেননা প্রাণ ও প্রকৃতি আমাদের জীবন ধারণে দরকারি, যা আমাদের শরীরে ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। তেমনি ভেষজ গুণে অনন্য এক উদ্ভিদ উলটকম্বল।
উলটকম্বল দেশে জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। যার ইংরেজি নাম ডেভিলস কটন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় উলটকম্বল গাছের বিস্তৃতি রয়েছে। এ ছাড়া এশিয়ার প্রধান অঞ্চল এর আদি নিবাস। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই উলটকম্বল গাছ দেখা যায়। ২-৩ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট গুল্মজাতীয় চিরহরিৎ গাছ এটি।
এ গাছের শাখার গোড়ার পাতা হৃৎপিণ্ডের মতো দেখায়, তবে পাতার সামনের দিকটা সরু, উজ্জ্বল সবুজ রঙের। পাতার বোঁটা ও কচি ডাল খয়েরি লাল, ডগার পাতাগুলো লম্বা আকৃতির। গাছের বাকল শক্ত আঁশযুক্ত, পানিতে ভেজালেও নষ্ট হয় না। নির্দিষ্ট বয়সে এ গাছে ফুল ফোটে। ফুলের রং খয়েরি। পাপড়ি পাঁচটি, গাছের কচি শাখায় ফুল ফোটে। ফুল দেখতে বেশ মনোরম।
গ্রীষ্ম থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়ে শরৎকাল পর্যন্ত ফুল ফোটে এবং শীতকালেও গাছে ফুল দেখা যায়। ফুল শেষে গাছে ফল হয়। ফল পঞ্চকোণাকৃতির, প্রথমে সবুজ রং এবং পরে পরিপক্ব ফল কালো রং ধারণ করে। পরিপক্ব ফল ফেটে যায়। ফলের ভেতর কম্বলের মতো লোমশ অংশ থাকে। ফল পাঁচটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত এবং এর ভেতর কালিজিরার মতো ছোট ছোট বীজ থাকে।
সাধারণত সব ধরনের সুনিষ্কাশিত মাটিতে উলটকম্বল গাছ জন্মে। তবে দো-আঁশ মাটি হলে ভালো। এ গাছ ছায়া সহ্য করতে পারে। পাহাড়ি বনাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রাম, শহর, বিভিন্ন পারিবারিক বাগান, রাস্তার ধার, ভেষজ বাগানে উলটকম্বল গাছ রোপণ করতে দেখা যায়।
উলটকম্বল গাছের পাতা, ডাল, মূল, বাকল বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গাছের বাকল ও ডাঁটা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে আঠালো পদার্থ বের হয় যা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। পাতার ডাঁটা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া উপশম, আমাশয় রোগের জন্য উপকারী। পাতা ও কাণ্ডের রস গনোরিয়া, ফোঁড়া ও স্ত্রী রোগে উপকারী। গবাদিপশুর পাতলা পায়খানা, বিলম্ব প্রজনন এবং হাঁস-মুরগির বিভিন্ন চিকিৎসায় উলটকম্বলের ব্যবহার রয়েছে।
উলটকম্বল একটি ভেষজ ঔষধি গাছ। এটা বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় এই গাছ পাওয়া যায়। উলট কম্বল গাছ ৮-১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। বেশি মোটা হয় না। গাছের ছালে রেশমের মতো আঁশ থাকে, ফুলের রঙ মেরুন। ফল পঞ্চকোণবিশিষ্ট লোমাবৃত। কাচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে ধূসর বর্ণের হয়। এর পাতা, গাছ ও মূলের ছাল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উলট কম্বল গাছের উপকারিতা
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: উলট কম্বল আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দারুণ কার্যকর। এজন্য ৫-৬ গ্রাম উলট কম্বল খোঁসা গুঁড়ো করে এর সাথে সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে রাতে গরম পানি দিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
২. রক্ত আমাশয় দূর করে: রক্ত আমাশয়ের জন্য উলট কম্বল ভালো একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এজন্য প্রতিদিন উলট কম্বল পাতা পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।
৩. শরীর ঠান্ডা রাখে: বিশেষ করে যেসব মানুষ হাত পায়ের জ্বালাপোড়া অনুভব করেন শরীর ঠান্ডা থাকে না তারা প্রতিদিন সকালে পেট কম্বল গাছের ছাল পাউডার করে খেতে পারেন এতে সারাদিন শরীর ঠান্ডা থাকবে।
৪. বন্ধ্যত্ব রোগীদের জন্য: উলট কম্বল উদ্ভিদের মূলের ছাল থেকে এক ধরনের আঠাজাতীয় রস বের হয়, যা গর্ভাশয়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে বন্ধ্যত্ব রোগীদের ক্ষেত্রে উলট কম্বলের মূলের ছাল ভীষণ উপকারী।
৫. চুল পড়া রোধ করে: উলট কম্বল চুল পড়া রোধ হয় এবং চুল ঘণ ও সবসময় কালো থাকবে। একই সাথে এটি আমাদের তারুণ্য ধরে রাখে এবং অকালে দাঁত পড়বে না ও চোখে চশমা দিতে হবে না।
৬. দীর্ঘদিন থেকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, জরায়ু সংক্রান্ত রোগ, বন্ধ্যাত্ব, ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এটি কার্যকর বলে জানান ভেষজ বিশেষজ্ঞগণ। এ থেকে তৈরি ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
৭. শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে: উলট কম্বল রস আয়ু, বল ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং একই সাথে আমাদের বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমায় ।
৮. গনেরা রোগীদের জন্য: পাতা ও কাণ্ডের রস গনোরিয়া রোগে বিশেষ উপকারী। দীর্ঘদিন থেকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, জরায়ু সংক্রান্ত রোগ, বন্ধ্যাত্ব, ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কার্যকর।
এছাড়াও এটি সর্দি-কাশি নিরাময় করে। একই সাথে এটি কৃমিনাশক, অনিদ্রা দূর করে, হাঁপানি ও কুষ্ঠরোগে বেশ কার্যকরী।