আজকের ব্যস্ত ও যান্ত্রিক জীবনে শরীরচর্চা যেন অনেকটাই উপেক্ষিত। অথচ সুস্থ-সবল শরীরের জন্য প্রতিদিনের সামান্য হাঁটাই হতে পারে এক অভাবনীয় সমাধান। বিশেষ করে এমন এক ব্যায়াম যা কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন ছাড়াই যে কেউ, যে কোনো সময়ে শুরু করতে পারে।
শুধু শরীর নয়, হাঁটার প্রভাব পড়ে মন, ঘুম, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরও। তবে হাঁটার উপকারের পাশাপাশি কিছু সতর্কতা না মানলে হতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সহজ অথচ শক্তিশালী অভ্যাসটি কীভাবে আমাদের জীবনে স্বাস্থ্য ও সুখের বার্তা বয়ে আনতে পারে।
হাঁটার উপকারিতা
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে: প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: হাঁটা ক্যালোরি পোড়ায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: হাঁটা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
মন ভালো রাখে: হাঁটার সময় শরীরে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
হাড় ও পেশি মজবুত করে: নিয়মিত হাঁটলে হাড়ে ক্যালসিয়াম জমে এবং পেশি শক্তিশালী হয়।
হাঁটার অপকারিতা
# অতিরিক্ত হাঁটার ফলে হাঁটুতে চাপ পড়ে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই জয়েন্টে সমস্যা আছে।
# ভুল পদ্ধতিতে হাঁটলে পিঠ বা কোমরে ব্যথা হতে পারে।
# খালি পায়ে বা অনুপযুক্ত জুতা পরে হাঁটলে পা ফাটা, গোড়ালি ব্যথা বা ক্যালাস হতে পারে।
হাঁটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?
# হাঁটার সময় পানি না খেলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
# দীর্ঘ সময় হাঁটার ফলে পেশিতে টান বা ব্যথা হতে পারে।
# হাঁটার পরে যথেষ্ট বিশ্রাম না নিলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
হাটলে কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে?
হ্যাঁ, হাঁটা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত হাঁটা শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে বিভিন্ন অ্যান্টিবডি ও শ্বেত রক্তকণিকা সহজে কাজ করতে পারে এবং ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
হাঁটা ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে?
নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরে শারীরিক পরিশ্রম হয়, যা রাতে ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে। এছাড়া হাঁটা মানসিক চাপ কমিয়ে মন শান্ত করে, যা নিদ্রার মান উন্নত করে।
সকালে খালি পেটে হাঁটার উপকারিতা
# চর্বি দ্রুত পুড়ে, ফলে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
# হজম ক্ষমতা উন্নত হয়
# মন-মেজাজ ভালো থাকে সারাদিন
তবে খালি পেটে হাঁটার আগে অল্প পানি পান করাই ভালো।
রাতে হাঁটার উপকারিতা
# রাতের খাবার হজমে সাহায্য করে
# ঘুমানোর আগে মানসিক চাপ কমায়
# ঘুম গভীর ও আরামদায়ক করে
বিশেষ করে রাতের খাবারের ৩০-৪৫ মিনিট পর হালকা হাঁটা উপকারী।
বিকেলে হাঁটার উপকারিতা
# সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে
# শরীরে শক্তি ও সতেজতা এনে দেয়
# রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
# হরমোন ব্যালেন্স করে, বিশেষ করে সন্ধ্যায় হালকা হাঁটা নারীদের হরমোন ভারসাম্যে সহায়ক।
প্রতিদিন অন্তত কতক্ষণ হাঁটা উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি গতিতে হাঁটা স্বাস্থ্যকর। তবে ওজন কমানো বা ফিটনেস বাড়ানোর জন্য ৪৫-৬০ মিনিট হাঁটা উত্তম।
সুন্দর করে হাঁটার নিয়ম
# সোজা হয়ে হাঁটুন- মেরুদণ্ড সোজা ও চোখ সামনে রাখুন
# পা ছোট ছোট করে ফেলুন, হাঁটার ছন্দ ঠিক রাখুন
# আরামদায়ক ও কুশনযুক্ত জুতা ব্যবহার করুন
# হাঁটার আগে হালকা স্ট্রেচিং করুন, হাঁটার পরে বিশ্রাম ও পানি পান করুন
হাঁটা এক সহজ কিন্তু দারুণ কার্যকর ব্যায়াম। এটি যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে, তেমনই মনকে করে চঞ্চল ও সতেজ। তবে প্রতিদিন নিয়ম মেনে, সঠিক পদ্ধতিতে হাঁটা জরুরি। মনে রাখবেন, হাঁটার সুবিধা তখনই উপভোগ করা সম্ভব, যখন আপনি তা অভ্যাসে পরিণত করেন- জোর করে নয়, উপভোগ করে।
আপনার মতামত লিখুন :