ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

প্রাকৃতিক রেচক সোনাপাতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
সোনাপাতা ছবি: সংগৃহীত

সবুজের মাঝে লুকিয়ে থাকা একটি পাতার নাম ‘সোনাপাতা’। দেখতে অনেকটা মেহেদি পাতার মতো হলেও, এর রং, গন্ধ ও গুণে রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। কাঁচা অবস্থায় পাতাটি হলুদাভ সবুজ, আর শুকিয়ে গেলে তা রূপ নেয় সোনালি বর্ণে- যেখানে নামের সঙ্গেই যেন রঙের এক অভূতপূর্ব সাযুজ্য।

এই ফার্ন জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদটি প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত তার বহুবিধ চিকিৎসা গুণের জন্য। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ- বহু সমস্যার সহজ সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই অনন্য প্রাকৃতিক রেচক। সোনাপাতায় থাকা প্রাকৃতিক যৌগ যেমন সেনোসাইড ও রেইন এনথ্রোন, হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে এবং বৃহদন্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে খুব সহজেই ও দ্রুত দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশিত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জার্মান কমিশন ‘ই’সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বল্পকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে সোনাপাতার ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে। এমনকি হার্বাল বিশেষজ্ঞদের মতে, এর গুঁড়া নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার হয় এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য এই উদ্ভিদকে ঘিরে তাই বাড়ছে সচেতনতার পরিধি, পাশাপাশি প্রশ্নও- কতটা নিরাপদ এই পাতার ব্যবহার? আর কতটুকু মাত্রায় এর গ্রহণ শরীরের উপকারে আসে?

আজকের এ লেখায় আমরা জানব সোনাপাতার ব্যবহারবিধি ও সতর্কতা- এক নজরে সোনাপাতা সম্পর্কে জানার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড।

সোনাপাতা

সোনাপাতা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি গুঁড়ো হিসেবে খাওয়ার উপযোগী করে তৈরি করা হয় এবং বিশেষত কিছু দেশি মিষ্টি বা আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যবহার করা হয়।

ভারতীয় ও প্রাচীন ইউনানি চিকিৎসায় সোনাপাতাকে শরীরের বল বৃদ্ধিকারী, মানসিক শান্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতো।

সোনাপাতার উপকারিতা

শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: সোনাপাতায় কিছু খনিজ উপাদান থাকে যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
মস্তিষ্কে শীতলতা এনে মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে: এটি বহু প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চর্চায় ব্যবহৃত হতো মানসিক প্রশান্তির জন্য।
ত্বকের জৌলুস বাড়ায়: কিছু প্রসাধনীতে সোনাপাতা ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান দেখাতে সাহায্য করে।
জৈবিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে: পুরোনো আয়ুর্বেদিক বিশ্বাস অনুযায়ী, সোনা শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।

সোনাপাতার অপকারিতা

খাঁটি না হলে বিপজ্জনক: নিম্নমানের বা কৃত্রিম সোনাপাতায় রাসায়নিক থাকতে পারে, যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে: অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা বা লিভারে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যালার্জি হতে পারে: কিছু মানুষের দেহে সংবেদনশীলতা থাকতে পারে, ফলে ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি হতে পারে।

সোনা পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম -৪ টি কার্যকারী নিয়ম জানুন | Happiness vlog  ✓

সোনাপাতা প্রতিদিন খেলে কি হয়?

প্রতিদিন সোনাপাতা খাওয়া বিজ্ঞানসম্মত নয়, এবং এটি অভ্যাসে পরিণত করা উচিত নয়। যদিও প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় সামান্য পরিমাণে ব্যবহারের রীতি ছিল, তবুও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রতিদিন খাওয়ার পক্ষে নয়। মাঝে মাঝে সঠিক পরিমাপে খাওয়া যেতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

সোনাপাতা কি ওজন কমায়?

সোনাপাতা নিজে ওজন কমানোর জন্য কার্যকর নয়। এটি ওজন কমানোর জন্য কোনো সক্রিয় উপাদান হিসেবে কাজ করে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ বা শারীরিক সতেজতায় সামান্য সহায়তা করতে পারে, তবে সরাসরি ‘ফ্যাট বার্নিং’ বা ‘মেটাবলিজম বুস্ট’ করার মতো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

ওজন কমানোর জন্য সোনাপাতা খাওয়ার নিয়ম কী?

যেহেতু সোনাপাতা ওজন কমানোর সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না, তাই এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাওয়ার নিয়ম নেই। যদি কেউ আয়ুর্বেদিক রেসিপির অংশ হিসেবে খেতে চায়, তাহলে তা যেন বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে আনা হয় এবং মাত্রা সীমিত থাকে।  
সেরা উপায় হলো: 
- দিনে ১ বার, খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে (যেমন ঘি, দুধ বা হার্বাল টনিকের সঙ্গে)
- সর্বোচ্চ ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যেই বিরতি রাখা উচিত  
- চিকিৎসকের পরামর্শ থাকা আবশ্যক

সোনাপাতা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এর উপকারিতাও কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণিত। তবে এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং পরিমিত ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপব্যবহার বা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে এটি উপকারের বদলে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।