ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

পুষ্টিগুণে ভরপুর হাঁসের ডিম

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
হাঁসের ডিম। ছবি: সংগৃহীত

শীতের সকালে ভাপ ওঠা একটা গরম গরম হাঁসের ডিম যদি থাকে, তাহলে কথাই নেই! একটু লবণ-মরিচ ছিটিয়ে খেলে স্বাদে যেমন তৃপ্তি মেলে, তেমনি শরীরও পায় দরকারি পুষ্টি। অনেকেই হয়তো ভাবেন- হাঁসের ডিম বুঝি শুধু স্বাদে ভালো, কিন্তু জানেন কি, এতে লুকিয়ে আছে দারুণ কিছু স্বাস্থ্যগুণ? 

হাঁসের ডিম খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে কারণ এতে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ডি, ই, বি-১২ ও খনিজ (যেমন আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম) বেশি থাকে। তবে এর কোলেস্টেরলের মাত্রাও তুলনামূলকভাবে বেশি, যা কিছু মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই হাঁসের ডিম নিয়মিত ও পরিমিত মাত্রায় খাওয়া হলে এটি শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা- সবকিছুতেই এর আছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে যেকোনো খাবারের মতো, হাঁসের ডিম খাওয়ারও আছে কিছু নিয়ম ও সীমা। এই লেখায় আমরা খুঁজে দেখব হাঁসের ডিমের সেই স্বাদ-স্মৃতি জড়ানো উপকারিতাগুলো, আর সতর্ক হব অপকারিতার দিক থেকেও।

হাঁসের ডিমের উপকারিতা

# উচ্চ মানের প্রোটিন– পেশি গঠন, হরমোন উৎপাদন ও টিস্যু মেরামতে সাহায্য করে।
# ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধ– চোখের দৃষ্টি, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
# ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড– হৃদরোগ প্রতিরোধ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
# লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়ক– এতে থাকা আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
# ত্বক ও চুলের জন্য ভালো– সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

হাঁসের ডিমের অপকারিতা

# উচ্চ কোলেস্টেরল– প্রতি হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মুরগির ডিমের চেয়ে অনেক বেশি, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
# অ্যালার্জি সমস্যা– যাদের ডিমে অ্যালার্জি আছে, তাদের হাঁসের ডিম খেলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
# ব্যাকটেরিয়ার ঝুঁকি– সঠিকভাবে রান্না না করলে সালমোনেলা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
# পচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি– তুলনামূলকভাবে বেশি চর্বি থাকায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়া যায় কি?

গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়া যেতে পারে যদি তা ভালোভাবে সেদ্ধ করা হয়। কাঁচা বা আধা সেদ্ধ ডিম খেলে সালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা গর্ভবতী নারীর ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া কোলেস্টেরল ও ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকায় গর্ভাবস্থায় নিয়মিত না খেয়ে মাঝে মাঝে পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো- এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

হাঁস নাকি মুরগি, কোন ডিম বেশি জরুরি
 

 

 

 

 

 

 

 


হাঁসের ডিম পুষ্টিগুণে মুরগির ডিমের চেয়ে সমৃদ্ধ হলেও, কোলেস্টেরল ও চর্বির কারণে সব মানুষের জন্য তা উপযুক্ত নয়। যারা শারীরিকভাবে বেশি পরিশ্রম করেন বা অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন, তাদের জন্য হাঁসের ডিম ভালো হতে পারে। আর যারা ডায়েট বা হৃদরোগজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য মুরগির ডিমই তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

হাঁসের ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য, যা সঠিকভাবে রান্না করে, পরিমিত মাত্রায় খেলে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ কিংবা বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে এটি ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিবেচনায় হাঁসের ডিম খাওয়ার আগে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।