দেশের বিভিন্ন অংশে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গ্রীষ্মে পাওয়া যায় অনেক ফল। এই গরমে শরীর সুস্থ রাখতে মৌসুমি ফল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে একটি দেশীয় ফল বাঙ্গি। অঞ্চলভেদে নাম পাল্টে কোথাও ডাকা হয় খরমুজ, কাঁকুড় বা বানি। ছোট এবং লম্বাটে জাতকে বলা হয় চিনাল। বাঙ্গি আকারে বেশ বড় হয়। কাচা ফল সবুজ, পেকে গেলে হলুদ রঙের হয়। বাঙ্গির স্বাদ নিয়ে সম্প্রতি নেটিজেনরা দুই ভাগে বিভক্ত। স্বাদে তেমন মিষ্টি নয়। তাই একদল বলছে, ‘এটা কেন খাব?’ আরেক দলের পছন্দের তালিকায় আছে এই হলুদ ফল। সুগন্ধযুক্ত সাধারণ স্বাদের বাঙ্গি কিন্তু পুষ্টিগুণে অনন্য।
বাঙ্গির পুষ্টিগুণ
জলীয় উপাদান: প্রায় ৮৯-৯০% পানি থাকে বাঙ্গিতে, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন থাকে যা ভিটামিন এ- তে রূপান্তরিত হয়।
ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক ও টিস্যু ঠিক রাখতে সহায়ক।
পটাসিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখে।
ম্যাগনেসিয়াম: পেশি ও নার্ভের কার্যক্রমে সাহায্য করে।
ডায়েটারি ফাইবার: হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বাঙ্গিতে লাইকোপিন ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরকে মুক্ত র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
লো ক্যালোরি: প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গিতে প্রায় ৩৪ ক্যালোরি থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
বাঙ্গি কিভাবে খায়?
কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন।
বাঙ্গি খেলে কি ওজন বাড়ে?
বাঙ্গি মিষ্টি কম হওয়ায়, অর্থাৎ চিনির পরিমাণ কম থাকায় বাঙ্গি খেলে ওজন বেড়ে যাবার প্রবণতা নেই। সুতরাং এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এই ফলের আশঁ শরীরের হজমশক্তি বাড়ায়। বাঙ্গিতে থাকা ফলিক এসিড শরিরের রক্ত তৈরিতে ভালো কাজ করে।
বাঙ্গির রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।
বাঙ্গির উপকারিতা
দেহ ঠান্ডা রাখে- বাঙ্গিতে প্রচুর পানি থাকে (প্রায় ৯০%), যা গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে।
হৃদয় সুস্থ রাখে- বাঙ্গিতে থাকা পটাসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
চোখের জন্য ভালো- বাঙ্গিতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন A চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
হজমে সহায়ক- বাঙ্গির মধ্যে থাকা ডায়েটারি ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারি- ভিটামিন এ ও সি ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক, সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ- বাঙ্গিতে থাকা লাইকোপিন ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং দেহের কোষগুলোকে রক্ষা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- বাঙ্গি ক্যালোরিতে কম এবং পানিতে বেশি হওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণে ভালো সহায়ক খাদ্য।
বাঙ্গির যেমন উপকারিতা আছে তেমনই কিছু অপকারিতাও আছে।
বাঙ্গির অপকারিতা
অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা: বেশি পরিমাণে বাঙ্গি খাওয়া হলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, ডায়রিয়া বা অম্বল হতে পারে। এতে থাকা ফাইবার অতিরিক্ত হলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাবধানতা: বাঙ্গির প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) আছে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিমাণমতো খাওয়া জরুরি। যদিও গ্লাইসেমিক লোড কম, তবুও রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে।
ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা: বাঙ্গি ঠান্ডা জাতীয় ফল, বেশি খেলে বা রাতে খেলে সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা হতে পারে।
সংক্রমণের ঝুঁকি: যদি ফলটি ঠিকভাবে ধোয়া না হয় বা ফ্রেশ না হয়, তাহলে ব্যাকটেরিয়া বা কীটনাশক থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা: ছোট বাচ্চারা বেশি খেলে পেট খারাপ বা অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :